বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্মঘট: বাস মালিকদের বিএনপির সতর্কতা

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ২০:০৩

বাস মালিক ও শ্রমিকদের বলছি, কাদের সহায়তায় এটা করছেন, যারা দেশ ধ্বংস করেছে, এটা করবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের সময় ধর্মঘট ডাকা বাস মালিকদের সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ধরনের কর্মসূচিকে জনগণের বিরুদ্ধাচরণ হিসেবে দেখছেন তিনি।

প্রথমে ময়মনসিংহ, পরে খুলনা, এরপর বরিশাল এবং সবশেষে রংপুরের পরিবহন মালিকরা বিএনপির সমাবেশের দিন নানা দাবি তুলে পরিবহন ধর্মঘট ডাকার পর প্রথমবারের মতো তাদের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি এলো।

বৃহস্পতিবার যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাস মালিক এবং শ্রমিকদের বলছি, কাদের সহায়তায় এটা করছেন, যারা দেশ ধ্বংস করেছে, এটা করবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না।’

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমাবেশ দেখে আপনাদের কম্পন উঠে গেছে। কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তাই সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য করছেন।

‘এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জনগণকে ভোগান্তি দেয়া ছাড়া অন্য কোনো লাভ হবে না। সবকিছু বন্ধ করে দিলেও এখন থেকে বিএনপির কোনো সমাবেশ বন্ধ হবে না।’

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের ঘোষণা রয়েছে তাদের।

চট্টগ্রামের সমাবেশ নির্বিঘ্নে হলেও ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ এবং ২২ অক্টোবর খুলনার মালিক সমিতিও বাস ধর্মঘট ডেকেছিল নানা দাবিতে। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশের ১০ দিন আগে ২৬ অক্টোবর সেখানকার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর তারা বাস চালাবেন না। দাবি হিসেবে মহাসড়কে তিন চাকার ধীরগতির যানবাহন বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছেন তারা।

১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনার পর ২৯ অক্টোবর রংপুর ও ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে

রংপুরের সমাবেশের দুই দিন আগে বিভাগীয় বাস মালিক সমিতি জেলা সমিতিকে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বাস চালাতে নিষেধ করেছে। কারণ হিসেবে মহাসড়কে নছিমন, করিমনের মতো তিন চাকার বিপজ্জনক যানবাহন বন্ধের দাবি তোলা হয়েছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই সরকারের প্ররোচনায় এসব ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সরকার পক্ষ বলছে, বিএনপির অতীতের নানা কর্মসূচিতে বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ভয়ে মালিকরা বাস বন্ধ রাখছেন, এতে সরকারের হাত নেই।

বিএনপি যখন সরকারে ছিল, তখন ২০০৫ ও ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচির আগেও এভাবে বাস বন্ধ হয়ে যেত, গণগ্রেপ্তার ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে হামলাও ছিল এক নিয়মিত ঘটনা। দেড় যুগ পরও বাস বন্ধের এই রীতি রয়ে গেছে।

সে সময় আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব অভিযোগ করতেন, এখন বিএনপির নেতারা সেসব কথা বলছেন।

আওয়ামী লীগের সরকার গুলি করে, নির্যাতন করে আন্দোলন বন্ধ করতে চায় উল্লেখ করে যুবদলের সমাবেশে ফখরুল বলেন, ‘মানুষ এখন জেগে উঠেছে। তাই গণজাগরণ ঠেকাতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

‘আন্দোলনে খালেদা জিয়া ও দলের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীরা মুক্ত হবেন। সে জন্য নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

‘নির্বাচনের খেলা আর নয়’

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া দেশে কোনো ‘নির্বাচনের খেলা’ হবে না বলেও জানিয়ে দেন ফখরুল। বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া ফাঁকা মাঠে খেলা হয় না। পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। সেই নির্বাচনে বিএনপি খেলবে।

'অতীতে দুই নির্বাচনের মতো এবার খেলতে দেয়া হবে না। ইতিপূর্বে আপনারা ফাঁকা মাঠে বহু খেলেছেন। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছেন।’

দেশের মানুষ এখন সীমাহীন কষ্টে আছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘অনেকটাই না খেয়ে মরার মতো অবস্থা। গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই; চারিদিকে শুধু নেই আর নেই।

‘সর্বত্র খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে দল নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’

সবার হাতে বাঁশের লাঠি রাখার নির্দেশ

সরকার নিষেধ করলেও বিএনপির সবাইকে বাঁশের লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসতে বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাঁশের লাঠি সবার হাতে থাকবে। আঘাত এলেই পাল্টা আঘাত। ওবায়দুল কাদের খেলতে আসেন। তবে খেলতে এসে ফাউল করলে হাত-পাও থাকবে না।’

নয়াপল্টনে যুবদলের সমাবেশে নেতা-কর্মী

তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করে রাজপথে আসেন। তার পরে খেলাতে আসেন।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ।

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে শোডাউন করেছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সময়ের আগেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল লোকারণ্য হয়ে যায়।

সমাবেশের কারণে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাইকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সমাবেশের মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য আসন রাখা হয়। চেয়ারে তাদের ছবি এবং জাতীয় পতাকা রাখা হয়।

এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল পল্টন এলাকায়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো গোলযোগ হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর