রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে সিনেট কার্যকরের দাবি জানিয়েছে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। এ ছাড়া ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়া গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুর তদন্তসহ মোট ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শাহরিয়ারের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য দেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমান উল্লাহ খান। শেষে ১৬টি দাবি তুলে ধরেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর।
দাবিগুলো আদায়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণাও দেন তিনি।
প্রথম দুই সপ্তাহ শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। পরের দুই সপ্তাহ নিয়মিত সেমিনার এবং নভেম্বরের শেষের দিকে ছাত্র সমাবেশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আমান উল্লাহ খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসোর্স প্রোডাক্ট বের হবে। এখান থেকে কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক ও গবেষকের পাশাপাশি ভালো রাজনীতিবিদ বের হবে। কিন্তু রাজনীতিবিদ তৈরির যে প্রক্রিয়া সেই রাকসু বন্ধ থাকার কারণে সেটি হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘রাকসুর সাবেক নেতারা আজ দেশকে লিড দিচ্ছে। কারণ সেখানে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল। তারা হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি ফুটে উঠেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন রাকসু বন্ধ থাকার কারণে সেটি হচ্ছে না।’
লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘অবিলম্বে রাকসু নির্বাচন দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে সিনেট কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনীয় আবাসিক হল নির্মাণ করতে হবে এবং প্রতিটি হলে সিট-সংক্রান্ত বিষয়াবলি অনলাইনে হালনাগাদ করতে হবে।
‘হলে রাজনৈতিক ব্লকের নামে দখলদারত্ব নিষিদ্ধ করতে হবে। ডাইনিং এবং ক্যানটিনে খাবারের মান বৃদ্ধি ও খাবারের মূল্য কমিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিদিন ও সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে। পরিবহনের রুট বৃদ্ধিসহ পরিবহন দপ্তরে পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অবস্থান, প্রয়োজনীয় মাত্রার উন্নত মানের ওষুধ সংরক্ষণ, রোগ নির্ণয়, সর্বাধুনিক পরীক্ষণ যন্ত্রপাতি, ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখার দাবিও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, উন্নত মানের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্মানীসহ গবেষণা সহকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ তৈরি, পূর্ণাঙ্গ টিএসসি নির্মাণ, হল, প্রশাসন এবং বিভাগসমূহের নামে বেনামে আদায় করা সব ধরনের অযৌক্তিক ফি বাতিল করতে, শিক্ষাসনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলন এবং সংশোধনে সব কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, চুরি, ছিনতাই, শিক্ষার্থী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ছাত্রী হলসমূহের সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিও জানানো হয়।
বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্স বাতিল, পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বরের বদলে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু, ভর্তি পরীক্ষায় চলমান পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিও তোলা হয় এ সময়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাঈমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক মীর আলহাজ, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন, হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহারাজও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।