রংপুরে শনিবার বিএনপির সমাবেশের এক দিন আগেই বাস ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বাস বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।রংপুর কলেজ রোড কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মডার্ন মোড় ও সাতমাথা এলাকায় যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘রংপুর-কুড়িগ্রাম রোডে প্রশাসনিক হয়রানি এবং মহাসড়কে ভটভটি, নছিমন, করিমনসহ লাইসেন্সবিহীন বাহন বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নয়।’ কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী মাহবুবা মোস্তারি বলেন, ‘আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম। বান্ধবীসহ বাড়ি যাব বলে বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। এসে শুনি বাস বন্ধ। আমরা তো আগে থেকে জানি না। এখন অটোরিকশায় যেতে হবে।’
বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন স্ট্যান্ডের যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
ওই স্ট্যান্ডে কথা হয় আরেক যাত্রী তৌহিদা আক্তার নিপুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত এ রকম হয় না। বাস ধর্মঘট হলে কয়েকদিন আগে থেকেই বলা হয় বা জানতে পারি। আজ নতুন অভিজ্ঞতা হলো, বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনি বাস নেই। এখন তো আর যাওয়া হবে না। অগত্যা মেসে ফিরে যেতে হচ্ছে।’বাসশ্রমিক আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের রাইতেই বলা হইসে বাস চলবে না। আমরা কাউন্টার খুলি নাই। এখান থেকে কুড়িগ্রাম গাড়ি যায়, আরও দুই দিন বাস বন্ধ থাকবে। মালিক সমিতি বাস বন্ধ করছে। আমাদের করার কিছুই নাই।’ রফরফ পরিবহনের কন্ডাক্টর সেলিম জানান, ‘আমরা এই ট্রিপ নিয়ে দিনাজপুর যাব আর আসা হবে না। মানে এটাই শেষ ট্রিপ। দুই দিন বাস চলবে না। আর লোকাল বাস তো বন্ধ।’শ্রমিকরা জানান, রংপুরের দুটি লোকাল বাসস্ট্যান্ড থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৮ উপজেলায় কয়েক শ বাস চলাচল করে। গেটলক বাস আছে আরও কয়েক শ।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কোনো বাধাই শনিবারের সমাবেশ বানচাল করতে পারবে না। সমাবেশ সফল হবেই।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের ঘোষণা রয়েছে তাদের।
১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ এবং ২২ অক্টোবর খুলনার মালিক সমিতিও বাস ধর্মঘট ডেকেছিল নানা দাবিতে। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশের ১০ দিন আগে ২৬ অক্টোবর সেখানকার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর তারা বাস চালাবেন না। দাবি হিসেবে মহাসড়কে তিন চাকার ধীরগতির যানবাহন বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই সরকারের প্ররোচনায় এসব ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সরকার পক্ষ বলছে, বিএনপির অতীতের নানা কর্মসূচিতে বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ভয়ে মালিকরা বাস বন্ধ রাখছেন, এতে সরকারের হাত নেই।
সমাবেশের আগে ধর্মঘটের এসব অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন রংপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সর্ববৃহৎ জনসমাগম করার টার্গেটও তাদের।
রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে আমরা প্রস্তুত। এ জন্য গত ৬ অক্টোবর থেকে রংপুর বিভাগের সব জেলা, উপজেলায় আমরা বৈঠক করেছি, সভা করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এর আগের তিনটি বিভাগীয় সমাবেশে সরকার বাধা দিয়েও গণসমাবেশে গণজোয়ার ঠেকাতে পারেনি, রংপুরেও পারবে না। আমরা সমাবেশ সফল করব, আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থক সবাই এখন ২৯ অক্টোবরের দিকে তাকিয়ে।’
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ এর আগেও সেটা হয়েছে। যদি বাধা আসে আশা করছি মানুষজন হেঁটে, সাইকেলে, বাইসাইকেলে, ভ্যানে করে হলেও সমাবেশে এসে যোগ দেবেন। সমাবেশের আগের দিন থেকেই নেতা-কর্মীরা রংপুরমুখী হবে।’