ঢাকা মহানগর পুলিশের সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা থাকবে কি না, সে বিষয়ে রোববার সিদ্ধান্ত জানাবে উচ্চ আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশ অ্যর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর যে দুই ধারায় এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ রুলস, ২০০৬-এর যে ক্ষমতাবলে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, সেগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। জানানো হয়েছে, আদেশ আসছে রোববার।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল মোমেন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।২০ অক্টোবর পুলিশের এই ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। এতে আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবির, চাঁদুপর বারের সেলিম আকবর ও রাজধানীর বাসিন্দা শাহ নুরুজ্জামান, মোহাম্মদ ইয়াসিন জনস্বার্থে এই আবেদনটি করেন।
আবেদনে ঢাকা মহানগর পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ২৯ ও ১০৫ ধারা এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (সভা, সমাবেশ, মিছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) রুলস, ২০০৬-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
২৯-এ বলা হয়েছে, জনসাধারণের শান্তি বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ কমিশনার যখনই প্রয়োজন মনে করবেন এবং যতদিনের প্রয়োজন বিবেচনা করবেন লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো জনসমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকারের অনুমতি ব্যতীত ৩০ দিনের বেশি বলবৎ থাকবে না।
১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের কোনো বিধান অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা তদুদ্দেশ্যে প্রণীত কোনো বিধি, প্রবিধান আদেশ বা নির্দেশের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজ বা ক্ষতির জন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।
সমাবেশের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
শুনানিতে কী কথাআইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাদেশের সেকশন ২৯ সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি মৌলিক অধিকারের বিরোধী। কারণ, সংবিধান বলছে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে সমাবেশ করার কথা।
‘আর অধ্যাদেশে পুলিশ কমিশনারকে দেয়া হয়েছে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা। দুটি ভিন্ন জিনিস, তাই এটি সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া রুলসে অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র কেন ব্যবহার করা হবে?’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘৩৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটা (সভা-সমাবেশ) নিয়ন্ত্রিত অধিকার। আইনের দ্বারা আরোপিত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে। দিস ইজ নট অ্যবসুলেট পাওয়ার। সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।
‘শৃঙ্খলা রক্ষা করবে পুলিশ। অধ্যাদেশের ২৯ সেকশন হচ্ছে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে।’
সে সময় আদালত বলেন, ‘আবেদনকারী বলতে চাচ্ছেন ২৯ সেকশনে পুলিশকে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না। বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থে ঢাকায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। যেমন মহানগরের বাইরে ১৪৪ ধারা দেয়া হয়। আর অধ্যাদেশের সেকশন ১০৫ হলো দায়মুক্তির বিধান। এটা সব আইনে আছে। তাই রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ যোগ্য।’