বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত আছে বলে আবার দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এভাবে জনগণকে আটকানো যাবে না।
আগামী শনিবার রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন থেকে বাস ধর্মঘট আহ্বান করার দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর নবম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সভায় বিএনপি নেতা বলেন, ‘খুলনার গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের বাধা ডিঙিয়ে জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণকে আর থামিয়ে রাখতে পারবে না।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের ঘোষণা রয়েছে তাদের।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের সমাবেশ নির্বিঘ্নে হলেও ময়মনসিংহ ও খুলনার সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকে মালিক সমিতি। রংপুরের সমাবেশের দুই দিন আগে সেখানকার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শুক্রবার ভোর থেকে ৪২ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের নির্দেশ এসেছে।
আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশের ১০ দিন আগেই সেখানকার মালিক সমিতিও ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চলছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন বিএনপির নয়, জনগণের আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণবিরোধী সরকার, এ দেশে গণতন্ত্র নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এটি প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য আমেরিকার সরকার কর্তৃক গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি।’
‘লোডশেডিং কেন ফিরল’বিদ্যুতের লোডশেডিং কেন ফিরল, সেই জবাবও চেয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে তরল গ্যাস ও এলএনজির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণে সরকার জ্বালানিটি আপাতত আমদানি না করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখেছে। এ কারণে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ ফিরে এসেছে, যে দুর্ভোগ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই মুক্তি মিলেছিল গত এক যুগে।
লোডশেডিং ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে এই বলে যে, গত এক যুগে বিদ্যুতের উন্নয়নের যে দাবি সরকার করে আসছিল, সেটি অসত্য। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুতের করুণ চিত্রের কথা স্মরণ করানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই সংকট সাময়িক, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলতি বছরের শেষে উৎপাদনে চলে আসলেই আর সমস্যা হবে না।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘লোডশেডিং কেন মিউজিয়াম থেকে জনগণের ঘরে ফিরে এসেছে, এটার জবাব এই অবৈধ সরকারকে জনগণের কাছে দিতে হবে। এর জবাব তারা দিতে পারবে না। তাই এ সরকারকে হটানো ছাড়া বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বাঁচানো যাবে না।’
গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করে মোশাররফ বলেন, ‘তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগঠক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভয়েস অফ আমেরিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে গিয়াস কামাল চৌধুরী জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।