বিএনপির আরও একটি বিভাগীয় সমাবেশের আগে বাস ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত এলো। শনিবার রংপুরে এই সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার ভোর থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে মালিক সমিতি।
এই কর্মসূচির কারণ হিসেবে মহাসড়কে নসিমন, করিমনের মতো তিন চাকার বিপজ্জনক যানবাহন বন্ধের দাবির কথা জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তবে বিকেলে বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাস মালিকদেরকে বাস না চালানোর নির্দেশের কথা জানানো হয়।
রংপুরের কুড়িগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের কর্মী আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নিষেধ করা হয়েছে গাড়ি চালানো। আজ থেকেই বন্ধ রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কেউ ফোন ধরেননি। তবে পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন স্ট্যান্ডে আসা যাত্রীরা
রংপুরে যে বাস ধর্মঘটের ঘোষণা এসেছে সেটি সকালেই স্পষ্ট হয়। জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি বন্ধে একটা দাবিদাওয়া আছে। আজ সন্ধ্যায় মালিক সমিতির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের ঘোষণা রয়েছে তাদের।
গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ এবং ২২ অক্টোবর খুলনার মালিক সমিতিও বাস ধর্মঘট ডেকেছিল নানা দাবিতে। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশের ১০ দিন আগে ২৬ অক্টোবর সেখানকার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর তারা বাস চালাবেন না। দাবি হিসেবে মহাসড়কে তিন চাকার ধীরগতির যানবাহন বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই সরকারের প্ররোচনায় এসব ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সরকার পক্ষ বলছে, বিএনপির অতীতের নানা কর্মসূচিতে বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ভয়ে মালিকরা বাস বন্ধ রাখছেন, এতে সরকারের হাত নেই।
সমাবেশের আগে ধর্মঘটের এসব অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন রংপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সর্ববৃহৎ জনসমাগম করার টার্গেটও তাদের।
গণসমাবেশের জন্য রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চলছে মঞ্চ তৈরির কর্মযজ্ঞ
রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে আমরা প্রস্তুত। এ জন্য গত ৬ অক্টোবর থেকে রংপুর বিভাগের সব জেলা, উপজেলায় আমরা বৈঠক করেছি, সভা করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এর আগের তিনটি বিভাগীয় সমাবেশে সরকার বাধা দিয়েও গণসমাবেশে গণজোয়ার ঠেকাতে পারেনি, রংপুরেও পারবে না। আমরা সমাবেশ সফল করব, আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থক সবাই এখন ২৯ অক্টোবরের দিকে তাকিয়ে।’
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ এর আগেও সেটা হয়েছে। যদি বাধা আসে আশা করছি মানুষজন হেঁটে, সাইকেলে, বাইসাইকেলে, ভ্যানে করে হলেও সমাবেশে এসে যোগ দেবেন। সমাবেশের আগের দিন থেকেই নেতা-কর্মীরা রংপুরমুখী হবে।’
বিএনপি যখন সরকারে ছিল, তখন ২০০৫ ও ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচির আগেও এভাবে বাস বন্ধ হয়ে যেত, গণগ্রেপ্তার ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে হামলাও ছিল এক নিয়মিত ঘটনা। দেড় যুগ পরও বাস বন্ধের এই রীতি রয়ে গেছে।
সে সময় আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব অভিযোগ করতেন, এখন বিএনপির নেতারা সেসব কথা বলছেন।