আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত বাতিলের চিন্তা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী জানান, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারায় তার (খালেদা জিয়া) দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে শর্তযুক্তভাবে তাকে যে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তার পরিবর্তন আনার কোনো চিন্তাভাবনা সরকার করছে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর চিন্তা নেই কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় না।’
দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ আগের শর্তে আরও ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা ষষ্ঠবারের মতো স্থগিত করা হয়।
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর, তবে আগেভাগে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাকে আর কারাগারে ফিরতে হয়নি। ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি দেশের অভ্যন্তরে তার মতো করে থাকতে পারবেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান বেগম খালেদা জিয়া। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে ওই বছরের অক্টোবরে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয় বিএনপি নেত্রীর। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আরও ৭ বছরের সাজা হয় তার।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন বিএনপির নেত্রী। তার জামিনের আবেদন বারবার নাকচ হওয়ার মধ্যে স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুক্তির আবেদন নিয়ে যান। আর সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ওই বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপিপ্রধান।
সে সময় সরকার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দুটি শর্তের কথা বলা হয়। প্রথমত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে যাবেন না। দ্বিতীয়ত, তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন।
‘জামায়াতের বিচার করতে আইনের পরিবর্তন দরকার’
কর্মশালায় জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তর সালে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই বিচার করে দেখিয়েছে, এই বিচার আওয়ামী লীগ সরকার করে। আপনারা দেখেছেন এরই মধ্যে অনেক রায় কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের বিচার করতে আইনের পরিবর্তন দরকার হবে। সেটা আমি অনেক আগেই বলেছি। এই আইনের সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে।
‘আমরা কিছুদিনের মধ্যেই আইনটা পাস করব। তারপর বিচারকাজ শুরু হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্য নাম নিয়ে নিবন্ধন নিতে তারা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এটা একটা বিচারাধীন বিষয়। আমি দেখতে চাই নির্বাচন কমিশন এটা কীভাবে হ্যান্ডেল করে। তারপর এটার ব্যাপারে আমি বক্তব্য দেব।’
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিল বিভাগে যেটা বিচারাধীন আছে, সেটার বিষয়ে শুনানির উদ্যোগ নেবেন কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে উদ্যোগ নেব।’
নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুকের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তৃতা করেন।