নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন সৌদি রয়েল ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই যেকোনো সময় এ সফর অনুষ্ঠিত হবে। এই সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন বাঁক বদল হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত মন্ত্রীকে জানান, যুবরাজ সালমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সৌদি রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। তিনি একটি সুখবর দিয়ে গেলেন। তা হলো ক্রাউন প্রিন্স ও মিনিস্টার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আজ সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত জানালেন আগামী বছরের শুরুর দিকে যুবরাজ বাংলাদেশ সফর করবেন।’
মন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, ‘জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ- এই মাসগুলো আমাদের জন্য ভালো। দেখা যাক। অনেক কাজে আমরা অগ্রসর হয়েছি। উনি এলে সেসব গতি পাবে। যেমন ইনভেস্টমেন্ট। সৌদিরা অনেক ক্ষেত্রে ইনভেস্ট করার প্রপোজাল নিয়ে আসছে। সেগুলো আমরা ফাইনালাইজ করছি। ইন প্রিন্সিপল ওই আর এগ্রিড।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পাওয়ার স্টেশন আছে। এলএনজি আছে, সোলার এনার্জি আছে, সমুদ্র বন্দর আছে, টার্মিনাল আছে…। যুবরাজ এলে এই কাজগুলো ত্বরান্বিত হবে। সম্প্রতি তাদের (সৌদি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন। আমরা ওনাদের এক্সপোতে সাপোর্ট দিয়েছি। সেই কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: নিউজবাংলা
দিনে চার হাজার ভিসা দিচ্ছে সৌদি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘সৌদি আরবে প্রায় ২৬ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। বর্তমানে প্রতিদিন তারা চার হাজারের মতো ভিসা দিচ্ছে । সম্প্রতি জনশক্তি এজেন্টদের সংস্থা বায়রার সঙ্গে দূতাবাসের একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
বিভিন্ন ধরনের সৌদি ভিসা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের ভিসা বায়োমেট্রিক করতে সাড়ে চার ডলার খরচ করতে হবে এবং এর পুরোটাই বহন করবে চাকরিদাতা। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল এটির জন্য দূতাবাসকে ৩০ ডলার দিতে হবে। এটা নিয়ে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল।
‘আমি রাষ্ট্রদূতকে বলেছি বর্তমানে যেভাবে চলছে সেভাবেই চালু রাখেন। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করেন। পরে আমরা আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এমনিতে এখন অনেক লোক যাচ্ছে সৌদি আরবে। তারা নিচ্ছে। পরিবেশও আগের চেয়ে ভালো। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে আমাদের নারী কর্মীরা সে দেশে যেতে আগের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী মাসে সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের ঢাকা সফরের সময়ে এই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান নিউজবাংলাকে একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি অক্লান্ত চেষ্টা করছি সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশা করি এটি একটি ভালো সফর হবে।’
সফরে কী চুক্তি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি হবে। চুক্তিতে তথ্য সরবরাহ, উপাত্ত যাচাই করার মতো বিষয়গুলো থাকবে। ২৬ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে বাস করে। তাদের নিরাপত্তা দেখাও আমাদের দায়িত্ব।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি হবে। এটি অত্যন্ত ভালো। আমরা এটির সঙ্গে আছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে।’