অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন শাখা কমিটিতে পদ দেয়ার অভিযোগ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান এখন দুই মেরুতে। সই জালিয়াতি করে কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়ে একে অপরকে দুষছেন তারা।
বুধবার জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে জরুরি বর্ধিত সভা হলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।
বুধবার জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে জরুরি বর্ধিত সভার একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগে এ বিভক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে দপ্তর সম্পাদকের ডাকা বুধবারের জরুরি সভা স্থগিতের পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দেন উপ-দপ্তর সম্পাদক। পরে আবার সেই বিজ্ঞপ্তিকে ভুয়া আখ্যায়িত করে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সভা শুরু করেন সভাপতি ও তার সমর্থকরা। এতে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি নিয়ে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন নেতারা।
কেন্দ্রীয় কমিটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া ছাত্রলীগের তিনটি শাখা কমিটি বাতিল করে দিয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি করতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজসহ ৫টি শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয় গত ২২ অক্টোবর। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই ছিল। পরের দিন সেই ৫টি ইউনিটেরই আবার নতুন কমিটি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই কমিটির ঘোষণাতেও প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই দেখা যায়।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ২২ তারিখের কমিটিকে বৈধ বলে দাবি করেন। অন্যদিকে ২৩ তারিখের কমিটি বৈধ বলে দাবি করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে ‘সই জালিয়াতির’ অভিযোগ তোলেন।
এরপর ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিলুপ্ত ঘোষণা’ করা হয় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজ ও দৌলতপুর কলেজ শাখার কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন কমিটি করার নির্দেশ দেয়।
বির্তকিত কমিটি বাতিলের বিজ্ঞপ্তি। ছবি: নিউজবাংলা
সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে বুধবার বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বর্ধিত সভা ডাকে জেলা ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রক্তিম ঘোষ জেলার সকল শাখা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।
বুধবার সকালে উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমামে রুরে মাসুদ রনি সই করা আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা আসে জরুরি বর্ধিত সভা স্থগিত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে উপ-দপ্তর সম্পাদকের ‘স্থগিত ঘোষণা’ ভুয়া এবং বিভ্রান্ত না হয়ে নেতাদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন।
সভা ডাকা ও স্থগিত নিয়ে দুই পক্ষের প্রেস বিজ্ঞপ্তি। ছবি: নিউজবাংলা
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জরুরি বর্ধিত সভা শুরু হয়। এখানে নেতারা সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে নেতাদের কমিটিতে নাম দেয়ার বিস্তর অভিযোগ করেন।’ এসব বক্তব্য রেজুলেশনভুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে বলে জানান সভাপতি।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, ‘নিয়ম মেনে বর্ধিত সভা হয়নি। সভা ডাকতে হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মতামত লাগে। আমার মতামত নেয়া হয়নি। তাই আমরা এটা স্থগিত করার নোটিশ দিয়েছিলাম।
‘সভায় অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন না। আর এ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কল রেকর্ড শোনানো হয়েছে, যা গর্হিত কাজ।’ পদ বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন সাধারণ সম্পাদক।