নাটোরের গুরুদাসপুরে নির্যাতনের শিকার কুলসুম বেওয়া নামে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে মামলা দিয়ে বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পমপাথুরিয়া গ্রামে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ৭৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রতিবেশী দুই যুবক।
পরে গণউপদ্রব আইনে ওই বৃদ্ধা ও তার মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালতের বিচারক আশরাফুন্নাহার রীটা তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধা জানান, তার স্বামী অনেক দিন আগে মারা গেছেন। তার চার মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো মেয়ে বিয়ের পর থেকেই জামাইসহ তার বাসায় বাস করছেন।
মঙ্গলবার হঠাৎ অসুস্থ পড়লে তার মেয়ে জামাই আবুল কাশেম ওষুধ কিনে এনে তার ঘরে প্রবেশ করেন।
এর পরপরই রতন ও উজ্জ্বল নামে প্রতিবেশী ২ যুবক হইচই করে লোক লোকজন জড়ো করেন এবং অপবাদ দেন- বৃদ্ধা তার মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছিলেন।
এ অবস্থায় তারা বৃদ্ধাকে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন এবং তাকে ও তার মেয়ে জামাইকে মারধর করেন।
পরে তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে বৃদ্ধাসহ তার জামাতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মেজো মেয়ে জানান, অসুস্থ থাকায় তিনি বনপাড়া ক্লিনিকে ছিলেন। এদিকে তার মা-ও জ্বরে ভুগছিলেন। পরে তার স্বামী ওষুধ কিনে এনে তার মাকে ডেকে তা খেতে বলেন।
এ সময়ই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মা ও স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বৃদ্ধার মেয়ে।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী মুক্তার হোসেন বলেন, ‘৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ও তার জামাতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে এ বৃদ্ধার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে প্রতিবেশীরা মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। সেই সঙ্গে পুলিশও নির্যাতনকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গণউপদ্রব আইনে মামলা করে তাদের আদালতে পাঠিয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জেলা মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আদালত আছে, আইন আছে। কিন্তু তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই বৃদ্ধা ও তার মেয়ে জামাইকে আটক করে গণউপদ্রব আইনে মামলা করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বৃদ্ধাকে বেঁধে নির্যাতন করল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’