‘সরকার কাউকে জোর করে নিয়ে মারে না। এটা সরকারের নীতিও নয়। আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বানোয়াট কথা প্রচার করা হয়। তবে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার এসব বানোয়াট তথ্য এখন আর বিশ্বাস করে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
‘জাতিসংঘের আঙিনায় শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় সম্পৃক্ত আছি। সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে আমরা সর্বোচ্চ ভোটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু দেশের অনেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভুল ও বানোয়াট তথ্য দেয়। ভালো খবর হলো- বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার এসব বানোয়াট তথ্য বিশ্বাস করে না। ফলে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল আবারও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু কিছু লোক নিখোঁজ হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ হয় কয়েক লাখ লোক।
‘আমাদের এখানে ৭৪ জন নাকি নিখোঁজ হয়েছে। এসব লোক ২০০৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। আর খুঁজতে গিয়েই আমরা ৮ জনকে ফিরে পেয়েছি। সম্প্রতি আরও ২ জন পাওয়া গেছে, যারা ভারতের লোক। এতে এখন নিখোঁজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ জন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গত ৩ বছরে বিচারহীনভাবে কেউ খুন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কেউ জানলে জানান, সরকার দেখবে। সরকার কাউকে জোর করে নিয়ে মারে না। এটা আমাদের নীতি নয়। র্যাব যেসব জায়গায় অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ববোধ রয়েছে।’
‘বঙ্গবন্ধু প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির কারণে আমাদের শত্রু নেই’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এই নীতি তৈরি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পররাষ্ট্র নীতি এখন চালু রেখেছি। অনেক ধরনের সমস্যা আছে। তবে এই যে পররাষ্ট্রনীতি তা দেশের জন্য এখনও খুবই প্রযোজ্য।
‘পররাষ্ট্র নীতির কারণে আমাদের শত্রু নেই। আজকের দিনে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক কঠিন। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যে অনেক জোরালো তা প্রমাণ হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের মতো দেশগুলোকে অসুবিধায় ফেলেছে। এর কারণ মূলত নিষেধাজ্ঞা আর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। অথচ এসব নিষেধাজ্ঞা যাদের উদ্দেশে দেয়া হয়েছিল তারা সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’
যুদ্ধ বন্ধ করা বাংলাদেশের বড় দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ মানেই হচ্ছে দরিদ্র, শিশু ও নারীদের ওপর অসীম আঘাত। এই যুদ্ধেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নেই। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী জোরদাবি জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধ বন্ধ করতে।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় প্রথম দেশ। ১ লাখ ৮১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক শান্তিরক্ষায় কাজ করেছে। এতে আমাদের শান্তির অগ্রজ বলে একটি নাম দাঁড়িয়ে গেছে। শুধু শান্তির অগ্রযাত্রা নয়, যাতে শান্তি স্থায়ী সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তা হলো কালচারাল পিস (সাংস্কৃতিক শান্তি)। এটি থাকলে পৃথিবীতে সংঘাত হবে না, হিংসা বাড়বে না। মিয়ানমারের নাগরিকও এখানে আসবে না।’
একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ২০১২ সালে জাতিসংঘে তুলেছিলাম। তখন আমাদের বন্ধু দেশগুলো বলল, আপনাদের দেশে গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন কি না?
‘তখনও ২৫ মার্চ গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কারণে গত ১-২ বছর হলো আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। এখন আমাদের দেন দরবারের সুযোগ বেড়েছে।’
ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, লেখক ও ফোরামের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের ডিরেক্টর (মিডিয়া) আফিজুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাশ।