রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ হাজার ইয়াবা বড়িসহ এরশাদুল হক নামের কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার এরশাদ মাছের ট্রাকে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান পাঠাতেন। পরে বিমানে উড়ে এসে সে চালান রিসিভ করে পাইকারি কারবারিদের কাছে বিক্রি করতেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসি ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান।
যেভাবে গ্রেপ্তাররাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রায় এক মাস আগে এরশাদুলের ইয়াবা সিন্ডিকেট সম্পর্কে অবগত হই। এরশাদুলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির জন্য আমরা সোর্স নিয়োগ করি।
‘গত ২৪ অক্টোবর রমনা সার্কেলের পরিদর্শক তমিজ উদ্দিন মৃধা ক্রেতা সেজে দুই হাজার ইয়াবা কেনার দেন-দরবার করার সময় এ চক্রের সহযোগী সদস্য হুমায়নকে তার স্ত্রীসহ ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। হুমায়ন ও তার স্ত্রীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এরশাদুলের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হই।’
ডিএনসির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: নিউজবাংলা
হুমায়নকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে রাশেদুজ্জামান জানান, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার ইয়াবা কারবারের গডফাদার এরশাদুল। তিনি ইয়াবার বড় চালান নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করবেন বলে খবর আসে, যার ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএনসি জানায়, এরশাদুল সরকারি একটি কলেজ থেকে বিবিএ করেন। তিনি নিজেকে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট টিমের সাবেক ক্যাপ্টেন বলে দাবি করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উখিয়ায় এরশাদুলের কয়েকটি মাছের প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের আড়ালে ইয়াবার কারবার করতেন তিনি।
কারবারের কৌশলগ্রেপ্তার এরশাদুল মাছ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের মধ্যে বিশেষ কায়দায় চুম্বক ব্যবহার করে ঢাকায় ইয়াবার বড় চালান নিয়ে আসতেন। এ কাজে তার একাধিক সহযোগী ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসির কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, এরশাদুল সরাসরি মিয়ানমারের ইয়াবার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। নৌপথে অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইয়াবার চালান আনতেন টেকনাফে। এরপর তা নির্ভরযোগ্য সোর্স ও বাহকের মাধমে ঢাকায় পাঠাতেন কখনও বাসে, কখনও ট্রাকে। তিনি নিজে কখনও ইয়াবা বহন করতেন না।
ইয়াবাসহ এরশাদুল হক নামের কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসি। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও বলেন, ‘(এরশাদুল) ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে নিজে ঢাকায় যাতায়াত করতেন বিমানে। ঢাকা ও মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করতেন।
‘তার মোবাইলফোন বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জব্দ চালানের পূর্বেও একাধিকবার ইয়াবার বড় চালান ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীর (কারবারি) কাছে সরবরাহ করেছেন। নিজে করতেন লেনদেন।’
৮০ টাকায় কিনে ৩০০ টাকায় বিক্রিডিএনসির কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান জানান, পাইকারিতে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা সংগ্রহ করতেন এরশাদুল। তিনি প্রতিটি বড়ি ৮০ টাকায় কিনে ঢাকায় বেচতেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। নৌপথে ইয়াবার চালান আনার ক্ষেত্রে তিনি একাধিক রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করতেন।
গ্রেপ্তার এরশাদুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান রাশেদুজ্জামান।