বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা চায় না চীন

  •    
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:৩৬

বাংলাদেশে অনেক চীনা কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী। চীনারা এখন বাংলাদেশকে পজিটিভভাবেই দেখে। সে কারণে আমরা স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চাই: ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত

চীন স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

তিনি বলেছেন, দেশের যেকোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ ‍উপায়ে মীমাংসার পক্ষে তারা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার কূটনৈতিক সংবাদকর্মীদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’-এ অতিথি হয়ে আসেন জিমিং। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা এ অঞ্চলে কোনো সংঘাত চাই না। বাংলাদেশের যেকোনো অভ্যন্তরীণ ইস্যু শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাধান হবে, সেটাই দেখতে চাই আমরা।’

বাংলাদেশে অনেক চীনা কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীনারা এখন বাংলাদেশকে পজিটিভভাবেই দেখে। সে কারণে আমরা স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চাই।’

ইউক্রেন ইস্যুতে চীন ও বাংলাদেশের অবস্থান একই বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘দুই দেশই শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে।’

চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়বে।

চীনে ব্যবসা বাড়াতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম বলে আক্ষেপও করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের ওখানে বড় একটা ট্রেড সেন্টার আছে ২০০ বর্গকিলোমিটারের। সেখানে বাংলাদেশের প্যাভেলিয়ান আছে। বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে ওড়ে। সুন্দর লাইটিং করা আছে। কিন্তু এ দেশের ব্যবসায়ীরা সে সুযোগ নেন না। কখনও কিছু মানুষের দেখা মিললেও পণ্য মেলে না।’

চীনা বাজার ধরতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলব না বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজাইড কান্ট্রি, সেটা হতে আরও অনেক দূর। তবে তা শুরু হয়েছে। চীনা বিনিয়োগ আসছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। এখানে পণ্য উৎপাদিত হয়ে চীনে গেলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।’

অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুই দেশ রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় নিজ নিজ মুদ্রায় বাণিজ্যের দিকে যেতে পারে। দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করতে পারে।’

‘চীনের ঋণে ফাঁদ নেই’

চীনের ঋণকে ‘ফাঁদ’ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে যে লেখালেখি হয়, সেটিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমের অপপ্রচার বলেন লি জিমিং।

অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার পর চীন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে দেদার ঋণ দিচ্ছে। এসব দেশের একটি ছিল শ্রীলঙ্কা, যারা চীনের টাকায় উচ্চাভিলাষী নানা প্রকল্প করে বিপাকে পড়েছে। একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করার পর কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সেই বন্দরের কর্তৃত্ব চীনের হাতে তুলে দিতে হয়েছে।

করোনার পর শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর চীনা ঋণের ফাঁদ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে যে, কেবল এই দেশ নয়, আফ্রিকার একাধিক দেশও চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ঢাকায় চীনা দূত গণমাধ্যমের এসব লেখালেখি নিয়ে শ্রীলঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম চীনা ঋণের ফাঁদ শব্দ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আপনি যদি মনযোগী দৃষ্টি দেন দেখবেন দেশটির বেশি ঋণই পশ্চিমা ও বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থার। সম্ভবত বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই।…শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের কোথাও চীনা ঋণের কোনো ফাঁদ নেই।’

বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচার হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক অনেক ভালো। কারণ, অন্য দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক কম। এমনকি উন্নত দেশগুলোর চেয়েও।’

চীনা দূত বলেন, আমেরিকার ঋণের পরিমাণ ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার, অথচ তাদের জিডিপি ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। জাপান ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ক্ষেত্রেও চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মতো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা অনেক কম, জিডিপির মাত্র ৪৬ ভাগ।

চীন থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নিয়েছে, সেটি মোট ঋণের ‘খুবই ক্ষুদ্র অংশ’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, শ্রীলঙ্কার ঋণের ১০ শতাংশ চীনের আর বাংলাদেশে এই হার ৬ শতাংশেরও কম।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অপেক্ষার পরামর্শ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এক প্রশ্নে চীনা দূর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে রাখাইনে শান্তি ফেরা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।'

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন নীরবে কাজ করছে। আমরা অবশ্যই নিরাপদ, স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চাই। আমরা রিলিফতত্ত্বে বিশ্বাসী না।’

বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের শক্তি বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে গোলা পড়ার বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নে লি জিমিং বলেন, ‘সীমান্তের ঘটনায় মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তারা এখন সীমান্তের সংঘাত নিয়ে টেনশনে আছে। তারা বলেছে, সেটা নিরসন হলেই প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি কক্সবাজার ও ভাসানচর পরিদর্শন করেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের নানান সহায়তা করছে চীন। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরতে হবে।’

ক্লিন এনার্জিতে সহায়তা করবে চীন

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চীন আগ্রহী বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। বলেন, ‘কারখানা, পোস্ট অফিস, বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লিন অ্যানার্জির লক্ষ্যে সোলার প্যানেল স্থাপনে সহায়তা করবে চীন। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোলার প্যানেল উৎপাদন করে চীন।’

তিনি বলেন, ‘চীন এলএনজি ও ক্রুড ওয়েল আমদানিনির্ভর দেশ। চীন কোনো ধরনের এলএনজি বা জ্বালানি রপ্তানি করে না। তবে বাংলাদেশের চলমান বিদ্যুৎ-সংকটে আমরা জরুরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

‘ভারতকে শত্রু দেশ ভাবে না চীন’

অন্য এক প্রশ্নে এ কথা উল্লেখ করে চীনা দূত বলেন, ‘চীন ভারতের কৌশলগত প্রতিযোগী নয়। দুটো দেশই ১০০ কোটির বেশি মানুষের আবাসস্থল। দেশ দুটি সবার কল্যাণে কাজ করতে পারে। উচিত হবে না দুই দেশের মধ্যে সংঘাত তৈরি করার।'

তিনি বলেন, ‘আমরা একযোগে উন্নয়ন ও ভূরাজনৈতিকভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা এশিয়ান কান্ট্রি। এশিয়ার মতো করেই সমস্যার সমাধান করব।

‘আমি নিজেও ভারতের বিগ ফ্যান। ভারতে আমার অনেক বন্ধু রয়েছেন। বে অব বেঙ্গলে আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে পাচ্ছি, যা চীন দেখতে চায় না।’

আলোচনায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আহত-নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান চীনা দূত। বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।’

অনুষ্ঠানে ডিকাব প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিনও বক্তব্য দেন।

এ বিভাগের আরো খবর