নিজের হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলে কৃত্রিম হাত সংযোজন করেছেন। সেই কৃত্রিম হাতের ফাঁকা জায়গায় বহন করতেন ইয়াবা। এমন অভিনব কায়দায় তিনি বছর চারেক ইয়াবা বিক্রি করে আসছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ, তবে এই কাজে আরও আগে থেকেই জড়িত।
তার নাম রানা হাওলাদার। ধরা পড়েছেন হাতিরঝিল থানা পুলিশের কাছে।
বাহিনীটি জানায়, রানা অটোরিকশা চালান। পাশাপাশি ইয়াবা সরবরাহ করতেন। কৃত্রিম হাত সংযুক্ত থাকায় তাকে সবাই সহানুভূতির চোখে দেখত। এই সুযোগটিই কাজে লাগাতেন তিনি।
বিশেষ করে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে রানা ও তার সহযোগীরা মাদক হাতবদল করতেন। ভিক্ষা বা হ্যান্ডশেক করার ছলে এই কাজ করা হতো। আর রানা ছিলেন মূলত খুচরা বিক্রেতা।
রানা হাওলাদারের কৃত্রিম হাত। ছবি: নিউজবাংলা
বুধবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সবারই একটি সফট দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু তারা এটি কাজে লাগিয়ে এ ধরনের অপরাধ করছে এবং এটা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বছর চারেক আগে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রানা হাওলাদারের বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলেন চিকিৎসক। এরপর সেখানে লাগানো হয় কৃত্রিম হাত।
পুলিশ জানতে পারে রানা সেই কৃত্রিম হাতের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ইয়াবা বহন করেন। হাতিরঝিল থানার একটি দল পশ্চিম রামপুরার উমর আলী লেন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের সময় সেখানে ১৫৫টি সাদা ইয়াবা রাখা ছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আজিমুল জানান, রানা বেশ কিছুদিন থেকে মিরপুর এলাকায় থাকেন। আগের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর সাত দিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মঙ্গলবার মিরপুর থেকে বাসে করে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। রামপুরা এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে তার স্ত্রীকে বসতে বলে ইয়াবা ডেলিভারি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন।
রানার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের সখিপুর থানায় দুটি মাদক মামলাসহ মোট তিনটি মামলার তথ্য পেয়েছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পুলিশ জানায়, তিনি যাকে ইয়াবা দিতে গিয়েছিলেন এবং যাদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করেন, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রানা কোনো চক্রের সদস্য কি না জানতে চাইলে ডিসি আজিমুল বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এমন চক্রে একজন নয় আরও অনেকজন আছে। আমরা একজনকে ধরে শুরু করেছি।
‘আমাদের কাছে তথ্যটি অনেক দিন ধরেই ছিল। আমরা কাজ করছি। সামনে আরও অনেক লোক জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে আমরা কাজ করছি।’
সাদা ইয়াবার বিষয়ে জানতে চাইলে আজিমুল হক বলেন, ‘মাদকের বিভিন্ন ডায়মেনশন থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন সাদা মাদক তৈরি হচ্ছে। যারা এটার প্রতি আসক্ত তাদের কাছে নতুনত্ব আনার জন্যই করা হচ্ছে।’