ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে উপকূলীয় ৪১৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর গাছচাপায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
দূর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের ৪১৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর এবং ১ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ এমনকি ঢাকাতেও আঘাত হেনেছে।
‘এর ফলে, গাছ চাপা পড়ে ৯ জন, শেষ তথ্য অনুযায়ী মারা গেছেন। এদের মধ্যে গোপালগঞ্জে ২ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১ জন, ভোলায় ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং শরিয়তপুরে ১ জন। সবগুলোরই কারণ ঘরের উপর গাছ পড়া। শুধু ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একজন বাহিরে ছিলেন এবং গাছচাপা পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘নিহত যারা হয়েছেন তাদের মধ্যে গোপালগঞ্জের ২ জনকে ইতিমধ্যে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বাকিদের অনুদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এটা আমাদের রাষ্ট্রের নীতিমালায় আছে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা। এ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য অবশ্যই আমরা মন্ত্রণালয় থেকে টিন দেব এবং গৃহনির্মাণ মজুরির জন্য নগদ অর্থ দেব। নিয়ম আছে যে, দুর্যোগের পর মাঠ প্রশাসন এটা অ্যাক্সেস করবে, তারপর জেলা পর্যায়ে ডিসিরা ডি ফর্মের মাধ্যমে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে।
‘এটার পর আমরা একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা করব। সেখানে যার যার মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি উপস্থাপন করবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব। এটা করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।’
প্রতিমন্ত্রী এনাম বলেন, ‘এর আগেও মৎসঘেরে ক্ষতি হয়েছে, তবে এবার ক্ষতি সামান্য। তারপরেও ক্ষতিগ্রস্ত মৎসচাষীদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে। যে পরিমাণ আবেদন করবে সে অনুযায়ী সাধারণত দেয়া হয়।’
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যখন উপকূলে আঘাত হানে সে সময় ভাটা চলছিল বলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হয়েছে বলেও জানান দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী।
বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য যে, সে সময় ভাটা ছিল। এ কারণে জলোচ্ছ্বাস হয়নি। সর্বোচ্চ ২ ফিট পানি প্রবেশ করেছে। শুধুমাত্র ভোলাতে ৭ ফিট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এ কারণে সেখানে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
‘আমরা জেলা প্রশাসনকে বলেছি চাহিদা পাঠাতে। আগামীকাল চাহিদা এলে আমরা বরাদ্দ দিতে পারব। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ টিন ও নগদ টাকা আছে। এখন যদি খাদ্যের অভাব থাকে, সেটাও পর্যাপ্ত মাঠে দেয়া আছে। যদি লাগে তারা সেটা বরাদ্দ দেবে।’
ঘূর্ণিঝড়টি মারাত্মক আকার ধারণ না করায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়াও জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। যেভাবে সিত্রাং সৃষ্টি হয়েছিল, যে সব পূর্বাভাস ছিল, যেভাবে এর বিস্তৃতি ছিল এবং যেভাবে সরাসরি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছিল, সবাই পূর্বাভাস দিয়েছিল যে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
‘কিন্তু আল্লাহর রহমতে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই ছিল, এটা প্রবল বা অতিপ্রবল বা সুপার সাইক্লোন কোনটাতেই রূপ নেয়নি। বাতাসের গতিবেগ ৮০ কিলোমিটারের উপরে যায়নি। আমাদের যে ঘোষণা ছিল, সেই সময়ের অনেক আগেই অনেক দ্রুত গতিতে আমাদের উপকূল অতিক্রম করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বাভাস ছিল, এটা বরগুনা ও পটুয়াখালীর উপর দিয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে টার্ন নেয়ার কারণে পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার শুরু থেকেই আমাদের মাঠ প্রশাসন ও ভলান্টিয়ার কাজ করেছে।
‘আমাদের প্রায় ৬ হাজার ৯২৫ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষকে আমরা নিরাপদে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যেহেতু রাত ১০টার পরে অতিক্রম করেছে, আশ্রিত মানুষরা মধ্যরাত থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। সকাল হতে হতে সব আশ্রয় কেন্দ্র খালি হয়ে যায়। ঘুর্ণিঝড়টি আবার লঘুচাপে পরিণত হয়েছে।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব নেই। চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ যেগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল সেগুলো এখন মেরামত করে দ্রুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
‘ঢাকায় আমরা দেখেছি, গাছ পড়েছে। কয়েক জায়গায় রাস্তা বন্ধ ছিল। তবে দ্রুত এগুলো সরানো হয়েছে। মোহাম্মদপুরে বেশ জলাবদ্ধতা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি।’