ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন অনেকে, একে একে ঘরে ফিরছেন তারা। আবাসস্থল আর সম্পদ যেভাবে রেখে এসেছিলেন, সিত্রাংয়ে তার কতটুকু ক্ষতি হলো, সে শঙ্কা বুকে বয়ে বড়ি যাচ্ছে এসব মানুষ।
সোমবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে সিত্রাং। এরপর কমতে থাকে প্রভাব। তবে মঙ্গলবার সকালেও অনেক এলাকায় বৃষ্টির খবর মিলেছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশজুড়ে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, পানিতে ডুবেছে অনেক এলাকা, গাছপালা উপড়ে গেছে।
বরগুনা
সিত্রাং আতঙ্কে জেলার অনেকেরই রাত কেটেছে আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে সকাল থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেন তারা।
ভারি বর্ষণ ও অতি জোয়ারে বরগুনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের বেশ কিছু এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
সোমবার রাত আটটার পর থেকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বইছিল জেলার অনেক জায়গায়। তবে মঙ্গলবার সকালে রোদ উঠেছে।
কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, অতি জোয়ার ও ভারি বর্ষণে আমনের মাঠ পানিতে প্লাবিত হলেও ফসলের ক্ষতি হয়নি। ইতোমধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে।
ঝড়ে জেলায় এক বৃদ্ধার প্রানহাণি হলেও সম্পদের তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন।
বাগেরহাট
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে বাগেরহাটবাসীর। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় জেলার বেশিরভাগ মানুষই জেগেছিলেন সারারাত।
জেলার ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিলেন ৭৩ হাজার ২০০ মানুষ। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরেতে শুরু করেন তারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়া রোদ্রউজ্জল থাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
জেলার শরণখোলা উপজেলা সাউথখালী এলাকার বাসিন্দা এম আকবর টুটুল বলেন, ‘ঘরের অবস্থা ভাল ছিল না। তাই রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কে রাত কাটিয়েছি। আল্লাহর রহমতে বড় কোন ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।’
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহিন শেখ বলেন, ‘আতঙ্কে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। বাড়িতেই ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, জেলার ৩৪৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩ হাজার ২০০ মানুষ নিয়েছিল। সবাই ফিরে যাচ্ছে। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে আমরা কাজ শুরু করেছি।
ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।
নোয়াখালী
সিত্রাংয়ের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ উপকূলীয় তিনটি উপজেলার ৪০১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৬ হাজার ১শত ৩৪জন লোক আশ্রয় নিয়ছিলেন। একে একে সবাই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিয়ার ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রের বেশিরভাগেই বিদ্যুৎ ছিল না রাতে। এতে দুর্ভোগে পড়েন আশ্রয় নেয়া লোকজন।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন জেলা প্রতিনিধি রুদ্র রুহান (বরগুনা), মামুন আহমেদ (বাগেরহাট) ও মাহবুবুর রহমান (নোয়াখালী)।