হাওয়াই মিঠাই বিক্রিই পেশা ৫৮ বছর বয়সী আবু বক্কর সিদ্দিকের। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি তাই করছেন। থাকার কোনো ঠিক নেই। বিভিন্ন জেলা শহরে কিংবা গ্রামে অস্থায়ী ভাড়ার বাড়িতে থাকেন। আবার কখনও কারোর আশ্রয়ে থেকে তৈরি করেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খাবার।
নিজের গ্রাম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চরগোবিন্দপুর। তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বতর্মানে মাসখানেক সময় ধরে তার অবস্থান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার পাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে। সেখানে থেকেই তৈরি করছেন হাওয়াই মিঠাই।
আবু বক্কর সিদ্দিকের তিন মেয়ে, এক ছেলে। ইতোমধ্যে বড় মেয়ে বিথী ও মেজো মেয়ে সৃতীর বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট মেয়ে ইতি নবম শ্রেণিতে পড়ছে। একমাত্র ছেলে আজিজুল ইলেকট্রনিক কাজ শিখছে।
ছোট মেয়ে ইতির বিয়ে দিতে পারলে আবু বকর এ পেশা ছেড়ে স্থায়ী হবেন নিজ গ্রামে। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে বছরের ১১ মাস কাটাতে হয় ভবঘুরের মতো। সংসার চালানোর অর্থ জোগাতে সুস্বাদু হাওয়াই মিঠাইয়ের ঝুলি কাঁধে নিয়ে তাকে ঘুরে বেড়াতে হয় পথে পথে।
আবু বকরের মেহেরপুরের অস্থায়ী আবাসে গিয়ে দেখা যায় তার হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্র: একটি কাঠের ফ্রেমের ওপর স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি গোলাকার একটি পাত্রের একপাশে একটি সাইকেলের প্যাডেল আকৃতির হ্যান্ডেল। তার ওপর ভর করে ঘুরছে গোলাকার একটি চাকতি।
স্থানীয় বাজার থেকে চিনি কিনে তার সঙ্গে কয়েকটি রঙ মেশানো হয়। অল্প পরিমাণে জাফরান মিশিয়ে তৈরি হয় লাল আর হলুদ রঙের মিঠাই। আর সাদা চিনি দিয়ে তৈরি হয় সাদা রঙের হাওয়াই মিঠাই।
শুরুতে মেশিনের নিচে আগুন দিয়ে তাপ দেয়া হয়। এরপর ওপরের দিকে থাকা নির্দিষ্ট স্থানে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। পরে হাত দিয়ে চাকতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করা হয় মিঠাই। এরপর সেগুলো পলিথিনের প্যাকেটে মুড়ে কখনও বাইসাইকেলে আবার কখনও পাইপের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফেরি করে বেড়ান কখনও শহরে, কখনও গ্রামে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে এভাবে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছেন আবু বক্কর সিদ্দিক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল নদী এলাকায়। নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে সব বিলীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি এই হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে বিক্রি শুরু করি। এই আয়ে চলে আমার সংসার।’
প্রতিদিন গড়ে ১৫০ প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই তৈরি করেন আবু বকর। প্রতি প্যাকেটে ছয় পিস করে ছোট মিঠাই থাকে। প্রতি প্যাকেট বিক্রি হয় ১০ টাকায়। এই মিঠাই তৈরি করতে দুই কেজি চিনি আর পলিথিনের প্যাকেট লাগে। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে তার ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘সংসার ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াতে আর ভালো লাগে না। আমার বয়স হয়েছে। আর পারি না। আয় রোজগারের অন্য পথ না থাকায় পথে পথে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে বেড়াই।
‘তবে এই ব্যবসা আর বেশিদিন করব না। আমার ছোট মেয়ের বিয়েশাদি দিতে পারলেই আমি গ্রামে থাকব। পরিবারের লোকজন ছেড়ে থাকতে খুব খারাপ লাগে।’