ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'-এর কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড়-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি জানান, উপকূলীয় জেলাগুলোতে মানুষের আশ্রয়ের জন্য ৭ হাজার ৩০টির মতো শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব শেল্টারে সকাল থেকেই মানুষদের নেয়ার শুরু হয়েছে। মাঠ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবীরা যেভাবে কাজ করছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আশাবাদী সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘১৫টি জেলায় ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আম্ফানে আমরা ২৪ লাখ ৭৬ হাজার আশ্রয় দিতে পেরেছিলাম। এখানে আমরা ২৫ লাখের মতো টার্গেটে রেখেছি, ১৫ জেলায়।’
আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের খাওয়াদাওয়ার জন্য প্রতিটি জেলায় ৫ লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এনামুর। বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা ড্রাই কেক এবং ড্রাই বিস্কিট পাঠিয়েছি। চাল, তেল, লবণ, চিনি এবং গুঁড়ামসলা পাঠিয়েছি, যাতে রান্না করে খাবার খাওয়াতে পারে।’
দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে বলে জানান এনামুর। বলেন, ‘তারা এতে সম্মতি দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টের ভলেন্টিয়াররা সিপিপি ভলেন্টিয়ারদের সঙ্গে কাজ করছে।’
সিত্রাং সিডরের মতো ধ্বংসাত্মক হবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, ‘সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। সিভিআর সাইক্লোনের পরে আরেকটা আছে, সেটা হচ্ছে ভেরি সিভিআর সাইক্লোন। তারপরে সুপার সাইক্লোন। বাতাসের গতিবেগ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হলে এটাকে সিভিআর সাইক্লোন বলা হয়। এটা (সিত্রাং) ভেরি সিভিআর অথবা সুপার সাইক্লোন হওয়ার আপাতত আমাদের কোনো প্রেডিকশন নাই।
‘আমরা চূড়ান্ত আঘাত বলতে কেন্দ্র বা সেন্টারকে আই বলি। আইয়ের আঘাতকে আমরা চূড়ান্ত বলি। আবহাওয়াবিদদের মতে, এটা আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে আঘাত হানবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে প্রস্তুতি মানুষ এবং গবাদিপশুর কোনো ক্ষতি আসলেই হবে না। তবে মৎস্য সম্পদ এবং কৃষি সম্পদের আমরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারব না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোনোভাবেই ক্ষতিটা মোকাবিলা করা যায় না।’
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ফোনে আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে এনে তাদের জীবন রক্ষা করা। একটি লোকও যদি মৃত্যুবরণ না করে, তাহলে সেটাই হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। একই সাথে তিনি বলেছেন, গবাদি পশুগুলোকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য।
‘এখন সব আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদি পশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। লোকজন যারা আসছেন, তারা তাদের গবাদি পশুসহ আসছেন। আর একটি নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন, আমরা যেন লোকজনকে উপদেশ দেই তাদের ঘরে যে খাদ্যগুলো আছে সেগুলো যাতে সঠিকভাবে মজুত করার ব্যবস্থা করেন।’