বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুলনায় বেড়িবাঁধে ধস, সিত্রাং নিয়ে চরম আতঙ্ক

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:১০

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ করে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যায়- সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'-এর প্রভাবে খুলনায় সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ক্রমে বাড়ছে বাতাসের গতিও। সবশেষ মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ নিউজবাংলাকে জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং অবস্থান করছে। বর্তমানে এটি মোংলা বন্দর থেকে ৫২৫ মিলিমিটার দূরে রয়েছে। এর গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। উপকূলীয় এলাকায় এর প্রভাব শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, সকাল থেকে খুলনা ও আশপাশের জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনায় রেকর্ড করা হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। বর্তমানে খুলনাতে ১৫-২০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বাতাসের গতিবেগ আরও বাড়বে।

আইলা, সিডর ও আম্পানের মতো ঝড়ে বারবার আক্রান্ত হয়েছে এই জনপথের মানুষ। তাই নতুন করে বাংলাদেশমুখী সিত্রাং নামক ঘূর্ণিঝড়ের চোখরাঙানিতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলবর্তী মানুষজনের মধ্যে।

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, কয়রার হ‌রিণ‌খোলা ও গা‌তির‌ঘেরী‌র বাঁ‌ধে ধস দেখা দি‌য়ে‌ছে। স্থানীয়‌দের নি‌য়ে মেরাম‌তের প্রস্তু‌তি‌ চল‌ছে। এ ছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, ৪ নম্বর কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে নিজ নিজ এলাকার বাঁধের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়ে‌ছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, চারপাশে নদীবেষ্টিত গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধ আইলার পর থেকে বেশ নিচু হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইয়াস ও আম্পানের পর থেকে বড়গাবুরা, হরিশখালীসহ কয়েকটি অংশের বাঁধও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। এমতাবস্থায় ইউনিয়নের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এই বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। এখন এই ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। ত‌বে স্থানীয়‌দের ভাষ্য ঝুঁ‌কিপূর্ণ বাঁ‌ধের প‌রিমাপ আরও বে‌শি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম জানান, দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢোকার সম্ভাবনা আছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডেও দুটি বিভাগের আওতায় ৭৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ২০০ কিলোমিটারের ৩৫টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তা ছাড়া বাকি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর সেকশন অফিসার মাসুদ রানা জানান, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রোববার সকাল থেকে শ্যামনগরের ভাঙনকবলিত নেবুবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করেছেন। পাউবোর পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে জিও ব্যাগ স্থাপনসহ জিও শিট বিছানো এবং মাটি দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সোমবারও ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থানে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুলনার দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের কিছু স্থানে সমস্যা রয়েছে। আমরা আপাতত দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য চেষ্টা করছি।’

কার্যক্রম বন্ধ মোংলা বন্দরের

দুর্যোগের প্রভাবে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কারণে গাড়িসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে ঢুকতে পারেনি। এ ছাড়া পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৭ নম্বর বিপৎসংকেত জারি হওয়ার পর আমরা জরুরি সভা করে বন্দরের নিজস্ব এলার্ট-থ্রি জারি করেছি। এ ছাড়া রোববার রাত থেকে বন্দরে অবস্থানরত ১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝড়ের কারণে সার, কয়লা, গাড়িরসহ পাঁচটি জাহাজ এই বন্দরে ঢুকতে পারেনি। এ ছাড়া পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি।’

দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত প্রশাসন

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির।

নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ইতিমধ্যে উপকূলীয় উপজেলা প্রশাসনকে দুর্যোগ মোকাবিলায় অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের ৭৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ কিলোমিটার বাঁধের ১০টি পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধের ভাঙন এড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০ হাজার জিও ব্যাগ মজুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় ১০৮টি এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, সুপেয় পানিসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়া দুর্যোগকালীন জরুরি সাড়াদানের জন্য জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ণকেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া ২৯৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হবে।’

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপে ১১৮টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, কয়রায় ১১৭টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, পাইকগাছায় ৩২টি, তেরখাদায় ২২টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার নিউজবাংলাকে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ করে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যায় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর