ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগর এখন উত্তাল। কক্সবাজার উপকূলে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিও। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে।
ইতোমধ্যে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসন। দুই জেলাতেই সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিক্যাল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিম।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হাতে রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং ৮৫টি মেডিক্যাল টিম। সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম আগে থেকেই প্রস্তুত। মজুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবারও।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ জানান, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি সকালে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। মধ্যরাতে এর দূরত্ব ছিল ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, আর সন্ধ্যায় ছিল ৭১০ কিলোমিটার। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
এদিকে সোমবার সকালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৪০১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
‘আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খুলেছি। সেই সঙ্গে আট হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার মজুত ছাড়াও মেডিক্যাল টিম, সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা দোয়া করি যেনো আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। কোনো ধরনের অসুবিধা হওয়া বা হওয়ার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত আছি।’
এদিকে সিত্রাংয়ের প্রভাবে নোয়াখালীতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নোয়াখালী ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় এসেছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে সিত্রাং শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। মঙ্গলবার এটি ভোরের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’