পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ গত কয়েক ঘণ্টায় আরও এগিয়ে এসেছে, দূরত্ব কমেছে কক্সবাজারসহ কয়েকটি এলাকার সঙ্গে। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে, এ বৃষ্টি চলবে সারা দিন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সিত্রাং উত্তর দিকে এগিয়েছে। রোববার মধ্যরাতে এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যা সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছিল ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। মধ্যরাতে সিত্রাং ছিল কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যে দূরত্ব সন্ধ্যায় ছিল ৭১০ কিলোমিটার।
সিত্রাং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ছিল মধ্যরাতে, এই দূরত্ব সন্ধ্যায় ছিল ৭০০ কিলোমিটার। পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকেও দূরত্ব কমেছে, সন্ধ্যায় ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে থাকলেও মধ্যরাতে এর অবস্থান ছিল ৬০০ কিলোমিটার দূরে।
অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি অথবা অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
সিত্রাংয়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
থাই ভাষার শব্দ সিত্রাং; যার অর্থ পাতা। সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়ের এই নাম দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন করে ঘূর্ণিঝড়টির বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। দেশের উপকূলের সব জায়গায়ই প্রভাব থাকবে।
তিনি বলেন, ‘ঝড়টি এখন যে অবস্থায় আছে যদি সেভাবেই থাকে তবে উপকূলে আঘাতের সময় সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। তবে এটা এখনও নিশ্চিত নয়, কারণ আমাদের উপকূল থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৭০০ কিলোমিটার দূরে আছে।’
সিত্রাংয়ের প্রভাব ইতোমধ্যে উপকূলসহ রাজধানীতে পড়েছে জানিয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, এটা আরও বাড়বে। সোমবার রাতটা মূলত ক্রুশিয়াল হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ এখন ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। যখন ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হবে তখন আমরা একে সিভিয়ার সাইক্লোন (প্রবল ঘূর্ণিঝড়) বলতে পারব। এটা এখনও নমিনাল সাইক্লোন অবস্থায় রয়েছে।’