রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
রাবি ক্যাম্পাসে রোববার দুপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা হয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
রাজশাহী নগরীর হড়গ্রামে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাবি ক্যাম্পাসে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে কথা বলা হচ্ছে তা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, জঙ্গি ও খুনিদের ষড়যন্ত্রের ফসল। আমরা ক্যাম্পাসে যাব, সভা করব। এটার জন্য তারা যেন অপেক্ষা করে।’
বুধবার রাতে রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর হাসপাতালে ভাঙচুর চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেন। সেখান থেকে তারা কর্মবিরতির কর্মসূচিও দেন।
এই মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য ও রামেক হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘রামেক শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হামলার জন্য রাবি ছাত্রদের সমালোচনা করেন বাদশা। বাদশার এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুরে মানববন্ধন করে রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় তার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়।
রাজশাহী নগরীর হড়গ্রামে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। ছবি: নিউজবাংলা
সংবাদ সম্মেলনে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কাল আমার দাবিটা ছিল মূলত একটি জায়গায়। মূল দাবি ছিল- ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট করো, কিন্তু জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাও। আরেকটা দাবি ছিল, যেটা ভিসিকেও বলেছি। আরএমপি কমিশনারকে বলেছি যে, এত বড় একটা ঘটনা, একটা ছাত্র কীভাবে মৃত্যুবরণ করল এটা পোস্টমর্টেম ছাড়া আপনারা কীভাবে ছেড়ে দেন। এটাই হলো বড় প্রশ্ন। এখনও আমি পোস্টমর্টেমের দাবি ত্যাগ করিনি। ১০ দিন পর হলেও করতে হবে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে হবে। এই দাবি করার জন্য আমাকে অবাঞ্ছিত করেছে।’
বাদশা বলেন, ‘গত ১০ বছরে রাবির চার শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চলছে। তার ধারাবাহিকতায় এই ছেলেটা খুন হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। এই সময়ে একটা ডেডবডি পোস্টমর্টেম ছাড়া ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি।
‘আমরা তথাকথিত একটা আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে গেছি। আমি পোস্টমর্টেম করাতে চাই। এই হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তা উদ্ঘাটন হোক। গতকাল আমি সারাদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম। বহু কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ বিশ্বাস করেনি যে এটা আত্মহত্যা বা পড়ে গিয়ে মৃত্যু। তারা বলেছে এটা হত্যাকাণ্ড।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘এতা হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে এটা তারই ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের আগে এই হত্যা এখান থেকেই শুরু হয়েছে। হত্যা যারা করেছে তারা আত্মরক্ষার জন্য মগজের গল্প এনেছে। আমি জানতে চাই এটি হত্যা, অ্যাকসিডেন্ট, নাকি আত্মহত্যা। আমি সন্দেহ করি এটি হত্যা।’
বুধবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। ওই রাতে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের মারামারি ও ভাঙচুরের কারণে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। রাবি ও রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই মামলা করেছেন।