নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া চাকরিজীবীদের সরকারি ও বেসরকারি নির্বিশেষে ৩০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেয়ার দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। আর মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও অসহায় মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যে রেশনিংয়ে দাবিও তুলেছেন তিনি।
রোববার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে উপজেলা দিবস পালনে এক আলোচনায় তিনি এ দাবি করেন।
জাপা নেতা বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সংসার চালাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তাই যারা সরকারি ও বেসরকারি চাকরি করে তাদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে হবে।‘
বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ আরও বেশি বিপাকে পড়েছে বলেও মনে করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জরিপ করা হলে অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কাছাকাছি কোনো দেশ নেই।
‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই দেশের রিজার্ভ কমে গেছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের যে আশঙ্কার কথা বলছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন জি এম কাদের। দাবি করেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই এবং এটি বাংলাদেশকে আরও বড় বিপদে ফেলবে।
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র চলছে। দেশ পরাধীন হলে অথবা একনায়কতন্ত্র চললে সে দেশে দুর্ভিক্ষ হবেই। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। বৈষম্য থেকেই দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।’
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না দেশ। এ কারণে বিদ্যুতের অভাবে কৃষকরা সেচ দিতে পারবে না। আবার বিশ্বব্যাপী সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উচ্চমূল্যে সার কিনতে পারবে না কৃষকরা। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছরই খাদ্যশষ্য নষ্ট হয় আমাদের।
‘সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বলা হচ্ছে, খাদ্য সংকট হবে। দিন দিন ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে, অধিক দামে খাবারও কিনতে পারবে না বাংলাদেশ। তাই দুর্ভিক্ষ ঠেকাতেও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মধ্যে আগামী বছর থেকে মেগা প্রকল্পের ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় জি এম কাদের। বলেন, ‘আগামী বছর থেকে সুদ ও আসল সহ ২২ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। তখন মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে দেশ।
‘যখন মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, তখন শুধু সুইস ব্যাংকেই পাচার হয়েছে ৪ লাখ কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পের নামে একটি শ্রেণির দেশে টাকা রাখার জায়গা নেই। তারা বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। আর বেশির ভাগ মানুষই খাবার কিনতে পারে না, অর্থের অভাবে শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে না।’
আলোচনায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আচরণ করেনি। দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, তারা জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।’
দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটনও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান, নাজনীন সুলতানা, নুরুল আজহার শামীম, মাসরুর মওলা, গোলাম মোস্তফা, হারুন অর রশীদ, মনির আহমেদ, মাহবুবুর রহমান লিপটন. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, আব্দুস সালাম, সালমা হোসেন, আহসান আদেলুর রহমান আদেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।