বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিত্রাং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলে

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৪২

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক সক্ষম। আমাদের পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র আছে। প্রয়োজনে এসব কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তাই এলাকার লোকজনকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

সিডর উপদ্রুত উপকূলীয় জেলা বরগুনায় সিত্রাং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা সিত্রাংয়ের খবরে এখন ভীতসন্ত্রস্ত। আবহাওয়া বিভাগের খবরেও আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকে। তাদের ধারণা, সিডরের মতোই প্রবল জলোচ্ছ্বাস ধেয়ে আসছে আবারও।

মূলত ফেসবুক ইউটিউবের প্রভাবেই তাদের মধ্যে এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত আবহাওয়া বিভাগের সবশেষ তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গভীর নিম্নচাপ ও পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এর গতিপথ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বরগুনায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে অব্যাহত রয়েছে। আকাশ গুমট, মেঘাচ্ছন্ন।

মূলত বৃষ্টিপাত শুরুর পর থেকেই বরগুনা জেলার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ সুপার সাইক্লোন সিডরের সঙ্গেও সিত্রাংয়ের তুলনা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

জেলার বিষখালী, বলেশ্বর এবং পায়রা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, সিত্রাং সিডরের চেয়েও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে সম্ভাব্য ঝড়টিকে ভয়ালভাবে উপস্থাপন করার ফলেই এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

এ ছাড়াও নদী তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকায় সুরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই। কোথাও কোথাও ভাঙা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় স্বাভাবিক জোয়ারেই প্লাবিত হয়ে আসছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা তাই নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, সুপার সাইক্লোন সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুলসহ সিডর-পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪৫০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৫৪ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। গত ১৫ বছরে এর অধিকাংশ মেরামত করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত ও ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এ অবস্থায় পাথরঘাটা সদরের রুহিতা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘সিডর আমাদের সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন কোনোমতে বেঁচে আছি। শুনছি, সিডরের চেয়েও বড় বন্যা আসবে। খবরটা শুনে ডরের চোটে কলিজা কাঁপছে।’

সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাথরঘাটা পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলী মিয়া বলেন, ‘মোগো দ্যাশে বোলে আবার বড় বইন্যা আইবে। হুনছি সবাই কয় সিডরের চাইতেও বড় বইন্যা। হাছা-মিছা কইতে পারি না, তয় পরাণডা কাঁপতাছে খবরডা হোনার পর।’

বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার শেখ জানান, সিডরে তাদের এলাকায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় এক কবরেই ওই এলাকার ৩৮ জনকে দাফন করা হয়েছিল।

সাত্তার বলেন, ‘এহন বোলে আবার সিডরের চাইতেও বড় বইন্যা আইবে হুনছি ফেসবুকের খবরে কয়। এইরহম অইলে মোরা কুম্মে যামু। মরণ ছাড়া উপায় থাকপেনানে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বরগুনা জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে এখনও প্রায় ৫০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার হয়নি। এ ছাড়াও বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানোর প্রয়োজন। আমরা বেশ কিছু এলাকার বাঁধ সংস্কার করেছি, এখনও কাজ চলছে। মূলত এই এলাকার মানুষ সিডরের পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখন অমাবস্যার প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে যাওয়াও আতঙ্ক ছড়ানোর আরেকটি কারণ।’

জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রমহান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক সক্ষম। আমাদের পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র আছে। প্রয়োজনে এসব কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তাই এলাকার লোকজনকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর