রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুতে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার রাতে হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় রাজপাড়া থানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম এ মামলা করেন।
এর আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজপাড়া থানায় মামলা করে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত ১৯ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠী মারা গেছেন এমন অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় রাবি শিক্ষার্থীদের।
রাবি প্রশাসনের মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৯ অক্টোবর রাতে আহত অবস্থায় শাহরিয়ারকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ারকে চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে না নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স দেরিতে আসেন এবং নানা অজুহাতে চিকিৎসা দিতে দেরি করেন। এতে শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, শাহরিয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু হওয়ায় তারা প্রতিবাদ ও ক্ষোভ করেন। সেই সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক, ইন্টার্ন, নার্স, আনসার ও তাদের সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকার্ত শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে হামলা চালায়। তারা লাঠি এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রসামগ্রী দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করে। আহত শিক্ষার্থীদের অনেককে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রসহ অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হতে হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের করা দুটি মামলাই শনিবার রাতে রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছে। ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এসব ঘটনার প্রভাব পড়ছে রাজশাহী মেডিক্যালে আসা রোগীদের ওপর। হাসপাতালটিতে শুধু চিকিৎসাই দিয়ে থাকেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ১৯ অক্টোবর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এবং পরে শনিবার দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের জরুরিসেবা চালু রাখলেও নিয়মিত চিকিৎসা থেকে বিরত রয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রোববার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।