সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ল। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৩০ অক্টোবর পরবর্তী দিন ঠিক করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
রোববার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে সময় আবেদন করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। রিটকারীর ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে আদালতে সময় চাওয়া হয়। আদালত সময় দিয়েছে।
‘তবে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, সেটা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে গত ২৫ আগস্ট রায় দেয় হাইকোর্ট। সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে। ১৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আদালত রায়ে বলেছে, ফৌজদারি আইনে বলা আছে, এ আইন সবার জন্য সমান। যেকোনো লোকের জন্যই সমান। এই ধরনের সুরক্ষা কোনো একটা গ্রুপকে দেয়া ঠিক হয়নি। এ জন্য আদালত বিধানটি বাতিল ঘোষণা করেছে। দেশে সাধারণত ফৌজদারি মামলায় এমনিতেই তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি বছর বছর ধরে চলে। এর মধ্যে যদি এই বিধান যুক্ত করা হয়, তাহলে সেই তদন্ত আর শেষ হবে না।
রায়ে আরও বলা হয়, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। আর সরকারি চাকরিজীবীরা কর্মরত অবস্থায় কোনো ফৌজদারি মামলায় জড়ালে তার দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। সুতরাং এ অবস্থায় নতুন করে এ বিধান যুক্ত করার দরকার নেই বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা বেআইনি, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬ (১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়, ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকরের কথা রয়েছে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগ করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।