পাবনার বেড়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ধরা হচ্ছে মা ইলিশ। অভিযোগ উঠেছে, মা ইলিশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা নৌ পুলিশকে উৎকোচ দিয়েই এভাবে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন জেলেরা। এ বিষয়ে প্রশাসনেরও নির্বিকার ভূমিকা দেখা গেছে।
সরেজমিনে উপজেলার নটাখোলা ঘাটে দেখা গেছে, ঘাটে ভেড়ানো অন্তত ১০টি ইলিশ ধরা নৌকায় জাল থেকে ইলিশ ছাড়িয়ে সেখানেই বিক্রি করা হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ছয় শ থেকে সাত শ টাকা দরে। আর ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চার শ থেকে সাড়ে চার শ টাকায়।
কাজিরহাট এলাকার পাইকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় আরও ভয়াবহ চিত্র। সেখানে প্রকাশ্যেই হাঁক-ডাকে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। বিক্রেতারা ক্রেতাদের বলছেন- ‘কোন সাইজের মাছ লাগবে- চলেন দেখাই।’
পরে বিক্রেতারা তাদের বাড়ির বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা মাছ দরদাম করে বিক্রি করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও নৌ পুলিশ সদস্যদের নৌকাপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিয়ে নদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলছে।
এ ছাড়া একটি দালাল চক্র নগরবাড়ির নৌ-পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলেদের নদীতে মাছ ধরার অনুমতি দেয়ার নামে ৪ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছে।
তবে সব জেলেই আবার এ অনুমোদন পাচ্ছে না। এমন অভিযোগও রয়েছে, যেসব জেলে অনুমতি ছাড়াই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নৌ-পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন তাদেরকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিতে হচ্ছে।
এভাবে ইলিশ ধরার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালদাহপাড়া গ্রামের এক জেলে বলেন, ‘পাচ্ছি না সরকারি সহায়তা। মাছ না মারলি বাড়ির হগলে খাব কি? তাই বাধ্য হয়া অভিযানের ফাঁকফুক দিয়ে মাঝে মধ্যে নদীতে মাছ ধরা ছাড়া উপায় নাই।’
পরিচয় গোপন করে নতুনভারেঙ্গা ইউনিয়নের আরেক জেলে বলেন, ‘নৌ-পুলিশকে টাকা না দিয়ে নদীতে মাছ ধরার উপায় নাই। আমাদের ৫-৬ জনকে ধরেছিল। আমরা জনপ্রতি ৩ হাজার করে টাকা দিয়ে ছাড়া পাইছি। নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে অনেক জেলেই নৌকাপ্রতি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাছ ধরার অনুমতি পাইছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দালালের মাধ্যমে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতির বিষয়ে নৌ-পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাই, মাছ ধরার অনুমতি দেয়া যাবে- তবে বিষয়টি নিজের বউকেও বলা যাবে না। নৌকাপ্রতি ৬ হাজার করে টাকা লাগবে। আমাদের পুলিশের কেউ বা প্রশাসনের কেউ নদীতে অভিযানে নামার আগেই আমি ফোনে জানিয়ে দেব তারা আধাঘণ্টার জন্য সরে থাকবে। পরে আবার মাছ ধরবে।’
এদিকে উৎকোচের বিনিময়ে ইলিশ ধরার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নগরবাড়ি নৌ-পুলিশের আইসি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নৌ-পুলিশের কোনো কর্মকর্তা অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। মা ইলিশ রক্ষায় দিনরাত আমরা অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছি।’
বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। ১৫ দিনে প্রায় ৪ লাখ মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী জানান, নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসনও নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে অনুমতি দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ পেলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’