যান্ত্রিক এই রাজধানী শহরে শিশুদের জন্য নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। সে কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুদের সেই চাহিদা পূরণে কাজ করছে ‘বাবুল্যান্ড’।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ‘বাবুল্যান্ড’-এ শনিবার আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
‘বাবুল্যান্ড’ দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড। এখানে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার শিশুকে পরিষেবা দেয়া হয়ে থাকে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ঢাকায় খেলার মাঠের অভাব ঘুচাতে বর্তমানে শিশুরা উদ্বেগজনক হারে ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা মনস্তাত্ত্বিকভাবেও তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় ‘বাবুল্যান্ড’ শিশুদের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সেমিনারে প্রধান বক্তা প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশনাদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা শহরে মাত্র ২৯৪ একর খেলার মাঠ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ১৮৭৬ একর বা ১৬ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রতিদিন ৭৭ শতাংশ শিশু পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম থেকে বঞ্চিত হয়। এটা পরবর্তীতে তাদের জন্য বিভিন্ন হৃদরোগ, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তাই আমাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্সের (বিআইপি) জরিপমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২৩৫টি খেলার মাঠ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন দুই হাজার চারশ’টি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান উই আর সোশ্যাল ও হুট স্যুটের দেয়া তথ্যমতে, খেলাধুলার সুযোগের অভাবে শিশুরা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে কাটাচ্ছে। অল্প বয়স থেকে এমন বিঘ্নিত মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ পরবর্তীতে কিশোরদের মধ্যে তৈরি করতে পারে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা।
প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, “শিশুদের সেবা ও সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আমরা ‘বাবুল্যান্ড সায়েন্স’ তৈরি করেছি। আমাদের শাখাগুলোতে রয়েছে অভিজ্ঞ ‘হ্যাপি হেলপার’, যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা বৃদ্ধিতে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করি। একইসঙ্গে নিয়মিত সুপার ফান ইভেন্ট, ভালো ভালো অভ্যাস গড়ার চর্চা, অ্যাক্টিভিটি ক্লাস ইত্যাদিও এখানে আয়োজন করা হয়।”
বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, উত্তরা ও ওয়ারীতে বাবুল্যান্ডের চারটি শাখা রয়েছে। সম্প্রতি বাবুল্যান্ড এঞ্জেল বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে ৪ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে দেশব্যাপী তাদের সেবার মান সম্প্রসারণ করতে এবং এর ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল চালুর মাধ্যমে আনন্দকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।
সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক অংশীদারসহ শিশু বিকাশে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা আলোচনা করেন।