বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৮ লাখ রোহিঙ্গা তালিকা থেকে ৬০ হাজার শনাক্ত

  •    
  • ২২ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৪১

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমাহীন নির্যাতন ও জুলুমের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি পাঁচ বছরের বেশি হবে। এটা তো আমাদের দেশ নয়, আমরা তো অবশ্যই আমাদের দেশে ফিরে যাব।’

দিল মোহাম্মদ। কয়েক বছর আগেও মিয়ানমারের দোভাষী হয়ে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া ছিল তার। সীমান্তে নানা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও বাংলাদেশের বিজিবির বৈঠকগুলোতে বড় ভূমিকা ছিল দিল মোহাম্মদের। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলে সেই বিশ্বস্ত বন্ধুকেও বিতাড়িত করে মিয়ানমার। সেই থেকে তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর জিরোলাইনে পরিবার নিয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন। সেই ক্যাম্পের প্রতিনিধিত্বও করছেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সে খবর পৌঁছানোর পর নিউজবাংলাকে দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমারের যে এলাকায় রোহিঙ্গাদের নেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেসব এলাকায় এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যে সংঘাত পরিস্থিতি, তাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। এমনও হতে পারে, যে কোনো হামলার দায় চাপিয়ে আবারও তাদের বিতাড়িত করার আশঙ্কা রয়েছে।’

যদি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরবেন জানিয়ে দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি মিললে যেতে আগ্রহী বেশিরভাগ রোহিঙ্গা।’

তার দৃষ্টিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান পরিস্থিতির কারণে অনেকে আগ্রহ হারাবে। তাতে গত দুইবারের মতো এবারও প্রত্যাবাসনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার বিষয়ে মিয়ানমারকে জোরালো চাপ প্রয়োগ করে তা নিশ্চিত করা উচিত হবে বলে মনে করেন দিল মোহাম্মদ।

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন নেতা মাস্টার মোহাম্মদ জুবাইয়ের। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের দায়িত্বও এখন তার কাঁধে।

ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ঢেকে যায় রাতের ক্যাম্প। দিনের বেলাতেও আমাদের জীবনটা অন্ধকারের মতোই। মিয়ানামার থেকে জীবন বাঁচাতে এসে, আমাদের ক্যাম্প জীবনও হুমকির মধ্যে। ক্যাম্প জীবন থেকে আমরা মুক্তি চাই। মিয়ানমার আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তারপরও একটু শান্তির আশ্বাস পেলেই আমরা ফিরে যাব নিজ দেশে।’

তিনি বলেন, ‘একজন দুজন করে নয়, পরিবার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চাই আমরা, যেখানে নাগরিক হিসেবে সব অধিকার থাকবে, থাকবে না কোনো বাধা বা নির্যাতন। এটা মিয়ানমারকে অক্ষরে অক্ষরে লিখিত দিতে হবে। হঠাৎ করে কী উদ্দেশে তারা আমাদের ফেরত নিতে এতো আগ্রহ দেখাল, তা নিয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের নেতা আব্দুল মোনাফ ফোনে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চীনের উদ্যোগ আশা জাগানিয়া। ২০১৭ সালে আমিও বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো দেখায় আবার ফেরত এসেছি। এখনও অনেক স্বজন সেখানে আছে। অধিকার নিশ্চিত হলে দেশে ফিরতে প্রস্তুত আমরা।’

কুতুপালং ক্যাম্প-২ ইস্টের রোহিঙ্গা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমাহীন নির্যাতন ও জুলুমের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি পাঁচ বছরের বেশি হবে। এটা তো আমাদের দেশ নয়, আমরা তো অবশ্যই আমাদের দেশে ফিরে যাব।’

আরেক রোহিঙ্গা মৌলবি আজিজ বলেন, ‘জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এসে আমাদের নিজেদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে বলেছিল। এখন পাঁচ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অধিকার নিয়ে নিজ দেশে পাঠানোর কোনো চেষ্টা কেউ করছে না। সবাই ভুলে গেছে, তাই দীর্ঘদিন ধরে আমরা ক্যাম্পে পড়ে আছি। তবে মিয়ানমারের যে আগ্রহ তা বাস্তবায়ন করা হোক।’

এরই মধ্যে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের জনগোষ্ঠীর জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া খুবই জরুরি বলছে জনপ্রতিনিধিরা।

জালিয়াপালং ইউনিয়নের কুতুপালং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাওয়া খুব জরুরি। নয়তো বড় বিপদে পড়বে এই অঞ্চল। পাহাড় ও নদী দূষণ ঘটছে। নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাজিকভাবে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে আমাদের।’

টেকনাফেন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘বর্তমানে টেকনাফে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান। তাদের কাছে এখন স্থানীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বেড়েছে নানা অপরাধ। এখন প্রয়োজন দ্রুত প্রত্যাবাসন।’

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মানিবকতা দেখাতে গিয়ে আমরা নিজের ঘাড়ে বোঝা তুলে নিয়েছি। তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হোক। না হয় উখিয়া-টেকনাফের মানুষ চরম কষ্টে পড়বে।’

শরণার্থীবিষয়ক কমিশন বলছে, ৮ লাখেরও বেশি তালিকা থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে নিজ দেশের বাসিন্দা হিসেবে বাছাই করেছে মিয়ানমার, যাদের ক্যাম্পগুলোতে শনাক্তও করা হয়েছে। যাচাই-বাচাই শেষ। নিবন্ধনও করা হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী।

প্রায় দুই মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংর্ঘষ চলছে।

এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশের মাটিতেও এসে পড়েছিল। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়।

সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি এখন বিভিন্ন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। আশ্রয় নেয় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। পাঁচ বছর পেরিয়ে তাদের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে।

জাতিসংঘসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো ভূমিকাই রাখছেন না বলে অভিযোগ ছিল রোহিঙ্গাদের।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুদেশের মধ্যে চুক্তি হলেও মিয়ানমারের অনীহা এবং রাখাইনে পরিবেশ তৈরি না হওয়াসহ নানা অজুহাতে দুই দফা সব প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। আশ্বাসের মধ্যেই পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম।

এ বিভাগের আরো খবর