বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ বিমানে ১০০ জন ড্রাইভারসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ছিল। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা।
এ সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিমানের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির লালবাগ বিভাগ। তারা হলেন- আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, মো. হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গতকাল (শুক্রবার) বড় ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বিমানের। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের তথ্য পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করি। প্রশ্ন ফাঁস ও প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তার কৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান জানান, তাদের সঙ্গে বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করে দেন- কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কিভাবে তা বিতরণ করবেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃতরা টাকার বিনিময়ে ফাঁস করা প্রশ্ন সরাসরি ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন। ফাঁস করা প্রশ্নপত্র তারা সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে তারা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নেন যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দিতে হবে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেই রহস্য উদ্ঘাটনে আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের সঙ্গে বিমানের ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তার সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। তারা জানিয়েছে, এর আগেও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে তারা লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই টাকার ভাগ ওইসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও পেয়েছেন। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
তিনি আরও বলেন, বিমানের ডিজিএম ও জিএম-এর সমন্বয়ে যে কমিটি গঠিত হিয়েছিল তাদের কাজ ছিল প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা। এখন তাদের চোখের আড়ালে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হলো তা আমরা জানতে চাইব। তাদের কাছ জানতে চাওয়া হবে, কিভাবে তাদের চোখ এড়িয়ে অফিস সহকারীরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে।
চক্রটি ফাঁস করা প্রশ্ন কতজন পরীক্ষার্থীদের কাছে বিলি করেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ‘তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারব।’