ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা সাংবাদিককে টার্গেট করে করা হয়নি, বরং জনস্বার্থেই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অবশ্য এই আইনের কিছু অপব্যবহার হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর বনানীতে ঢাকা আর্ট গ্যালারিতে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ বিষয়ক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাকস্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করা হয়নি। এটি জনস্বার্থেই হয়েছে। যদি মনে করেন, এই আইন সাংবাদিকদের টার্গেট করে, তা নয়।’
অপরাধের ভিত্তিতে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে এই আইন জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০১৯ সালে করোনা শুরু হওয়ার পরে আমি দেখেছি, এর কিছু কিছু মিস ইউজ-এবিউজ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে। সবাই তো স্বীকার করে না। তবে হ্যাঁ, এই অপপ্রয়োগ অনেকাংশে কমে এসেছে। থানায় গেলেই এখন ডিজিটাল আইনে মামলা নেয়া হয় না।’
কোনো অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পড়ছে কি না, সেটা নির্ধারণ করার জন্য একটা সেন্টার থাকবে। তারপরে, সেটা আদালতে গড়াবে বলেও জানান তিনি।
আনিসুল হক বলেন, ‘১৯৯০-৯২ সালে আমরা যখন ওকালতি করতাম, ম্যাক্সিমাম ডিটেনশনের মামলা পরিচালনা করতাম। আজকে দেখেন ডিটেনশন নেই। তখন এমন ছিল যে ৩০ দিন বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখতে পারে। পরে আরও ৬০ দিন আটক রাখতে পারবে। এখন কিন্তু আর সেটি নেই।’
কার্টুনিস্ট কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে ৩০০ দিন আটক রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘যেকোনো ইমপ্লিমেন্টের সময় কিছু অপব্যবহার হয়। আপনি কি মনে করেন আমরা কান বন্ধ করে রেখেছি। আমরা এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এ আইনের অজামিনযোগ্যের ধারার বিষয়ে বলেন, ‘অজামিনযোগ্য মানে এই না যে, সে কোনোদিন জামিন পাবে না। তাকে পুলিশ থানা থেকে ছাড়তে পারবে না। বিজ্ঞ আদালত বিবেচনা করবেন তাকে জামিন দেবেন, কি দেবেন না।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘আপনাদের এই আইনভীতি দূর করার জন্য কী কী করা দরকার, আমরা আপনাদের সঙ্গে বসে করব। ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ডেটা কন্ট্রোল করার জন্য এই আইন না, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। বিশ্বের যে মান, তার সঙ্গে মিলিয়ে আইন করা হবে।’
বৈঠকে মূল নিবন্ধ পাঠ করেন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান, চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সায়মান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. হারুন অর রশীদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না।