বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীতের আগে জামালপুরে ঢলের পানি

  •    
  • ২১ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:১৮

‘দুই-তিন দিনের মধ্যে আঙ্গরে (আমাদের) ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচের টাল তলায় গেছে। এই তিন দিনের ভেতরে একেবারে কিলিয়ার (ক্লিয়ার)। আমরা বান বুন (বাঁধ) দিলাম। কুলাইল না। এহন নসিবের উপরে ছাইরে দিছি।’

শীতের আগে আগে ফসলের মাঠে থইথই পানি দেখে হতবাক জামালপুরের মানুষ।

গত ১৫ অক্টোবর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সদর উপজেলার পাশাপাশি, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের ১২০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

মেলান্দ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কান্দারপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক বারেক মিয়ার কাছে আকস্মিক এই বান এক নতুন অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, ‘সার, কীটনাশক, তেল, কামলা সবকিছুর দামই বেশি। তাও সংসারের জন্য ৫২ শতাংশ জমিতে ধান আর ৫২ শতাংশ জমিতে মরিচ লাগাইছিলাম। এক রাইতের বন্যায় সব তলায় গেছে গা। এখন আমার সব শেষ। সংসার যে কেমনে চলব সেই চিন্তায় বাঁচি না।’

বুধবার সকালে কান্দারপাড়া গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার একর জমির ফসল বাঁচাতে কৃষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ক্ষেতের চারদিকে ছোট বাঁধ দিয়েও পানি ঠেকাতে না পেরে অনেকে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছেন।

কৃষক রইস মিয়া বলেন, ‘দুই-তিন দিনের মধ্যে আঙ্গরে (আমাদের) ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচের টাল তলায় গেছে। এই তিন দিনের ভেতরে একেবারে কিলিয়ার (ক্লিয়ার)। আমরা বান বুন (বাঁধ) দিলাম। কুলাইল না। এহন নসিবের উপরে ছাইরে দিছি।’

কৃষকরা বলছেন- টানা তিনদিন যমুনা ও ঝিনাইসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোপা আমন, ভুট্টা, মরিচ, মাসকালাই, মিষ্টি আলু, পেঁয়াজ, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি পানিতে ডুবেছে।

কান্দারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী বলেন, ‘মরিচের টালের মধ্যে আমরা যাই কিছু আবাদ করি। এইগুলা কইরেই আমরা চলি। এখন যে ডুইবে গেল গা। এহন চলার কোনো পথ নাই আঙ্গরে।’

কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘বন্যা আয়ে ধান গুইলে যে পচিছে, এহন পানিসহ নষ্ট। গরুরে এসব খিলেন যাব না। গরু অসুস্থ হয়ে যাব। পানি একদম পইচে শেষ। কিচ্ছু নাই। এহন পানি রোগ ছড়ায় কিনা এইডে নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।’

এমন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তার দাবি কৃষকদের।

আমজাদ হোসেন নামে ক্ষতিগ্রস্ত একজন বলেন, ‘আমার ৪-৫ পাহি বুইন ধান তলায় গেছে। ৫-৬ পাহি বুইন টাল তলায় গেছে। লাখ দেড়েক টাহা খরচ হইছে আমার। আমি এডা গরিব মানুষ। আমি কি কইরে খামু কোনো কুল কিনারা পাইতাছি না। কৃষি অফিস কিছু পরামর্শ দিতাছে তারপরেও আমার কোনো কাজে আসতাছে না।’

কান্দারপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘সরকারের কাছে এইডাই আকুল আবেদন। আঙ্গরে সরকার যদি ভর্তুকি না দেয়, তাহলে আমরা বাঁচতে পারমু না, চলতে পারমু না।’

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা অপ্রত্যাশিত পানিতে কৃষকরা হতবাক। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে, যাতে তার ফসল কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারে।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, ‘ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে টানা কয়েকদিন ভারি বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্ত্রের পানি বেড়েছে।

তিন দিন আগে থেকে ভারতে বৃষ্টি থেমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই জামালপুরেও পানি কমে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর