খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে কোনো গোলযোগ হলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সমাবেশকে ঘিরে এরই মধ্যে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহের সমাবেশের মতো এক সপ্তাহ পর খুলনার সমাবেশের দিনও পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাস মালিকরা। বিএনপির অভিযোগ, তাদের সমাবেশে যেন লোক আসতে না পারে, সে জন্য সরকারের নির্দেশে এই ঘটনা ঘটেছে।
ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে তারা ব্যাহত করছে। এখানে প্রমাণিত হয়েছে সরকার চায় না একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষ তাদের কথা বলুক, বক্তব্য, প্রতিবাদ প্রকাশ করুক। একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য সচেষ্টভাবে তারা চেষ্টা চালাচ্ছে।’
শুক্রবার গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: নিউজবাংলা
ফখরুলের অভিযোগ, পুলিশ ধরপাকড়ও করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র পুনউদ্ধারের জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলন করছি। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল খুলনায় আমাদের সমাবেশ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার একটি সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে খুলনায়।
‘পথে পথে আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে, সাধারণ মানুষদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, খুলনা দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য চন্দ্র রায় যে বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন গতকাল রাতে সেই বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আমি জানতে পেরেছি নির্দেশ দেয়া হয়েছে সড়কে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও আক্রমণাত্মক ভূমিকায় আছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতার। তিনি বলেন, ‘‘গতকাল তারা লাঠিসোটা রামদা নিয়ে শোডাউন করেছে। মোটরসাইকেল নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে।’
গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন ফখরুল। একই সঙ্গে খুলনা সমাবেশে যাতে বাধার সৃষ্টি না করা হয় সেজন্য আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘খুলনায় যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় এর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে এবং এতে প্রমাণিত হবে এ সরকার গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না আমাদের সবার সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।’
ফখরুল বলেন, ‘এরা তো জনভীতি রোগে ভোগে। এরা মানুষ দেখলেই ভয় পায়। এতে করে নির্বাচনগুলো সেভাবেই করে যাতে করে দলগুলোকে বাদ দিয়ে করা যায়। তারা ভয় পাচ্ছে এভাবে যদি জনগণ জেগে ওঠে তাহলে উত্তল সৃষ্টি হবে, আর হবেই। তখন তাদেরকে অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় চলে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে যে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির সতর্কতা দিচ্ছেন, সেটিও নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।
বলেন, ‘আপনারা অমর্ত্য সেনের বইটি পড়েছেন। সেখানে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে তিনি লিখেছেন। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষটি ছিল মানবসৃষ্ট। অর্থাৎ সে সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আজকে সেই একই কারণে বাংলাদেশের ঘটনা ঘটছে।’
কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে মানুষ কোনোরকম খেয়ে বেঁচে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষকদেরকে প্রত্যেক জনকে একটি করে সোনার মেডাল দেয়া উচিত।
‘এরা দুর্নীতির জন্য ব্যবস্থাগুলো করছে মুখে বলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আর লক্ষ লক্ষ টন বিদেশ থেকে আমদানি করছে। এদের পুরো লক্ষ্যটি হচ্ছে লুট করা চুরি করা সেখানে দুর্ভিক্ষের আগাম পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।