বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন নেই বলে দলটিকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, সরকার বরং তাকে দেশে ফেরাতে চায়।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান ক্ষমতাসীন দলের নেতা। এতে বিএনপির কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা নাকি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধাটা দিচ্ছে কে?’
বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে যেসব দাবি এবং লক্ষ্যের কথা তোলা হচ্ছে, তার মধ্যে আছে তারেক রহমানকে ফেরানো, যিনি গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পরের বছর চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে যান। তিনি আগামী ১১ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন বলে বিএনপির একটি কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের একজন নেতা বক্তব্য দিয়ে আলোড়ন তুলেছেন, যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা কিছুই বলছেন না।
সরকার তারেককে দেশে ফেরাতে উদগ্রীব এ কারণে যে, তিনি যেসব মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন, তার মধ্যে আছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা। এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও বিদেশে অর্থপাচার মামলায় তার সাত বছরের জেল ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের জেল ও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির এক মামলায় তার দুই বছরের দণ্ড হয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরে অবস্থান করায় কোনো দণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না।
বিএনপি নেতাকে ফেরাতে সরকার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে দেনদরবারও করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বিএনপি নেতা দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন বলে দলের পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে সে দেশের নাগরিকত্বও নিয়েছেন।
তারেক দেশে ফিরুক-এটাই সরকার চায় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা চাই, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার কৃত অপরাধের শাস্তি কার্যকর করা হোক। বুকে সৎ সাহস থাকলে সে দেশে ফিরে আসুক। তার জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের তথাকথিত টেক ব্যাক বাংলাদেশ আন্দোলনের নামে কার্যত হাওয়া ভবনের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, স্বেচ্ছাচারিতা এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপিই হলো এদেশের অস্তিত্ব, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো পাশবিক মানসিকতা লালন-পালনকারী বিএনপি এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে গণহত্যা সংঘটনকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী খুনি তারেক রহমানই হলো এদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রধান প্রতিবন্ধক।’
বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে কি না, সংশয়
নির্বাচন ছাড়া ‘অন্য কোনো চোরাগলি’ দিয়ে সরকার উৎখাতের সুযোগ নেই জানিয়ে ‘হঠকারী রাজনীতির’ জন্য বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের কথাও জানান কাদের।
‘নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও ব্যর্থতা ঢাকতে কত কথাই বলছে! এসব কথায় জনগণ কান দেয় না। বিএনপিকে বলতে চাই, জাতির অস্তিত্ব হাজার বছর ধরে ছিল, আছে এবং থাকবে। বরং হঠকারী রাজনীতির জন্য বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকবে কিনা সেটাই আজ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘জনগণের রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় মাথা পেতে গ্রহণ করেছে। নির্বাচন ব্যতীত অন্য কোনো চোরাগলি দিয়ে সরকারকে উৎখাত করার সুযোগ নেই।’
‘বিএনপি দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করছে’
সরকারকে সরাতে না পারলে নাকি জাতির অস্তিত্ব থাকবে না বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও জবাব দেন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, ‘বিরোধিতার নামে বিএনপিই এদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।’
আওয়ামী লীগকে সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ বলে বিএনপির দেয়া বক্তব্যের নিন্দাও জানিয়েছেন কাদের। দলটির প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘তাহলে বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি কি সফল? আন্দোলন ও নির্বাচনে যাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নেই। তাদের মুখে এ কথা মানায় না।
‘ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমুখী রাজনীতি ছাড়া বিরোধীদল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা কী? মহামারি করোনা মোকাবিলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জাতির কোনো প্রয়োজনেই তো বিএনপিকে দায়িত্বশীল বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।’
এদেশের যা কিছু নেতিবাচক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়, যত নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড তার প্রায় সবই বিএনপির নেতৃত্বে হয়েছে বলেও মন্তব্য তার। বলেন, ‘তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও জনগণ নিরাপদ নয়।’