রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও জনবসতি। নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় স্থাপনাও। একই সঙ্গে হ্রদের কিছু অংশ দখল করেও গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা।
জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসন তৎপর আছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙ্গামাটি সড়ক পরিবহন চালক সমবায় সমিতি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, শহরের ও দূরপাল্লার বাস রাখা, টিকিট সংগ্রহ করাসহ যাত্রীদের সব ধরনের সেবা দিতে ১৯৯৪ সালে চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙ্গামাটির শহরের ফিসারীবাঁধ এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হয়।
নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকার ১৬ বছর পর ২০১০ সালের দিকে আবার কাজ শুরু হয়। জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় ২০১২ সালে টার্মিনালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বহুদিন ধরে ওই জায়গায় বাস ও ট্রাক রাখা হলেও নেই টার্মিনালটির কার্যক্রম। গাড়ি পার্কিং করতে দিতে হচ্ছে চাঁদা। অপরিষ্কার ও খানাখন্দে ভরা জায়গাটি। বেদখল, সংস্কার না করা ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই টার্মিনাল। সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে রাঙ্গামাটিবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাস টার্মিনালের জায়গা দখল হয়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি ও দোকানপাট। টার্মিনালের ভেতর একটি কক্ষে বানানো হচ্ছে ফার্নিচার। অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা কক্ষের দরজা বন্ধ করে চলছে জুয়ার আসর। বাসের থেকে ট্রাক বেশি রাখা হয়েছে এ বাস টার্মিনালে।
টার্মিনালের জায়গায় লেকের বুকে নির্মাণ হচ্ছে রাঙ্গামাটি আইডিয়াল স্কুলের ভবন। ভবনটিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে লিখে দেয়া হয়েছে ‘রাঙ্গামাটি আইডিয়াল স্কুল ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থান’ ।
লেক দখল করে গড়ে উঠেছে ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
টার্মিনালের পাশে এখন গড়ে উঠেছে শান্তি নগর নামে একটি এলাকা। সমিতির নেতাদের অভিযোগ, এ জনবসতি আগে ছিল না।
সমিতির নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গাটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এটি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয়া হয়। ফলে বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি।
১৯৯৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সমিতির নিজস্ব ৯.৯০ একর জায়গাতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।
রাঙ্গামাটি সড়ক পরিবহন চালক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন বলেন, ‘শুরু থেকে বিভিন্ন জটিলতায় ১৯৯৪ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৬ বছরের ভেতর নির্মাণকাজ শেষ করেও টার্মিনালটি ব্যবহার হয়নি। পরে ২০১০ সালে ব্যবহার শুরু হলে অবৈধভাবে টার্মিনালটির জায়গা দখল হওয়ায় ২০১২ সালের দিকে আবারও ব্যবহার না করার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন,‘যারা অবৈধভাবে বেদখল করেছিল তাদের উচ্ছেদের জন্য ২০১২ সালে সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন দখলদার উচ্ছেদের নিদের্শ দিলে ডিসি, এডিসি, ইউএনও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলা বিভাগীয় পর্যায়ে থেকে এখন হাইকোর্টে।’
মামলার বিষয়টি জানেন না রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ খোঁজ নিতে হবে। তারপর বলতে পারব।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘সেখানে তো বসবাস কিংবা বাড়িঘর তোলার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টা দেখবে।’
এদিকে শহরে কাপ্তাই হ্রদ দখল করে বিভিন্ন জায়গায় বসতঘর ও বড় বড় স্থাপনা তৈরি হলেও তা নিয়ে পৌরসভার কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘লেকের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাপের বেশি বাইরে গিয়ে যদি স্থাপনা নির্মাণ হয়ে থাকে তাহলে তো অবশ্যই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা উচিত। যাচাই বাছাই করে টার্মিনালের নির্দিষ্ট রেকর্ডের জায়গা যদি কমতি থাকে নিশ্চই ওই জায়গাগুলো দখলমুক্ত করা উচিত।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যেম থেকে টার্মিনালটির বিষয়ে শুনেছি। জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা ও জেলা আরটিসি সভায় এসব আলোচনা করে পরবর্তীতে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।
‘তবে হ্রদ দখলমুক্ত রাখার তৎপড়তা প্রশাসনের অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনের তৎপড়তার কারণে কিন্তু শহরের আসামবস্তি এলাকায় অনেক জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরনের কোনোকিছু ছাড় দেয়া হবে না।’
শহরের রিজার্ভবাজার এলাকায় হ্রদের জায়গা দখল করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার নামে বহুতল ভবন।
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি পার্বত্য পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ে উন্নয়ন করতে হলে পাহাড়ে হাত দিতে হবে। আর রাঙ্গামাটি শহরে যদি কিছু করতে চাই তাহলে লেকের কিছু না কিছু অংশ পড়তে পারে। তবে পড়বে সেটা আমি বলবো না। আসলে লেক দখল হয়েছে কি না পরিমাপের বিষয়।
‘যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মাপের একটা নির্ধারণ আছে, লেকের লেভেলগুলো হয়তো পানির স্তর থেকে নিচের স্তর থেকে ১২০ ফুট বা ১০০ ফুট। এখন হয়তো লেকের অংশটা অনেক ওপরে এসে গেছে। ১৯৬০ সালের বাঁধের সময় যে পরিমাপ ছিল, সে পরিমাপ অনুযায়ী যদি আমরা দেখি তাহলে কোনো অবস্থাতে কোনো স্থাপনা লেকের ভেতরে পড়ে নাই।’