খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার শুরু হওয়া বাস ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী।
বাস বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের হাজারো শ্রমিক।
ভোর থেকে দুই দিনের ধর্মঘট শুরু করে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।
সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক চলাচল করছে। প্রশাসন এগুলো বন্ধ না করলে ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সব রুটে বাস বন্ধ থাকবে।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটা মালিক সমিতি নিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’
তিনি জানান, খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৮টি রুটে প্রায় এক হাজার ২০০টি বাস চলাচল করে। এতে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
সকাল ১০টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বাস না পেয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
শরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আজকে আমার কুষ্টিয়া যাওয়ার দরকার। আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ায়। মেয়ের বাচ্চা হবে।
‘সে অসুস্থ। আমাদের যেতে বলেছে, তবে স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন কী করে যাব?’
আশিকুর নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমার সাতক্ষীরা যেতে হবে, তবে স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন কেটে কেটে ছোট ছোট যানবাহনে করে বাড়িতে যেতে হবে।’
কর্মহীন হাজারো শ্রমিক
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব জানান, জেলায় পরিবহন খাতে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা এখন কর্মহীন।
সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শুক্রবার সকালে শ্রমিকদের অনেককে বাসে ঘুমাতে দেখা যায়। অনেকে ক্রিকেট খেলছিলেন। কেউ কেউ অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।
একটি বাসের হেলপার জয়ন্ত বলেন, ‘মোটর শ্রমিকরা মাসিক বেতন পান না। মালিকদের সঙ্গে তাদের চুক্তি অনুযায়ী গাড়ির চাকা ঘুরলে বেতন, না ঘুরলে নয়। এই দুই দিন সব শ্রমিক কর্মহীন থাকবে।’
বাসচালক শরাফাত বলেন, ‘হঠাৎ করেই নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন। বাস বন্ধ হয়ে গেল, তবে তারা আমাদের কথা চিন্তা করল না।
‘চিন্তা করার তো কিছু নাই। কারণ বাস না চললে তো মালিকদের বেতন দিতে হয় না।’
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান।
তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ ঘোষণার সময়ে আমি ঢাকায় ছিলাম। মালিক সমিতির অন্য সদস্যরা আমার সঙ্গে আলোচনা করেই ঘোষণা দিয়েছেন।’
বাস বন্ধ করতে দলীয় প্রভাব খাটিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমরা গত এক মাস ধরে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধের জন্য প্রশাসনকে বলে আসছি। গত এক মাসে আমরা কয়েকটি মিটিংও করেছি।
‘আর বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে তাতে আমাদের অসুবিধা কোথায়? তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা না করে, আমরা কেন করতে যাব?’