রাজধানীর আগারগাঁও থেকে শ্যামলীর শিশু মেলা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করে ছয় লেন করা হচ্ছে। পুরো সড়কের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু প্রশস্ত এ সড়কে গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে একটি ব্যক্তিগত স্থাপনা। সড়কের অনেকখানিজুড়ে একতলা এ স্থাপনা সরানো যায়নি। ফলে বেখাপ্পাভাবে প্রশস্ত সড়ক এখানে সংকীর্ণ হয়ে আছে।
রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত আগারগাঁওয়ের বেশ কয়েকটি সড়কেই চলছে প্রশস্ত করার মহাযজ্ঞ। কোনো সড়কের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, আবার কোনোটির কাজ চলছে জোরেশোরে।
এর মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত সড়কটি আগারগাঁও মোড় থেকে শ্যামলীর শিশু মেলা পর্যন্ত। সড়কের নাম সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়ক। এখানে ন্যাশনাল আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সামনে রয়ে গেছে ৬ শতাংশের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা– একটি একতলা টিনশেড। এটি একটি গাড়ি সার্ভিসিংয়ের দোকান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন এ জায়গাটুকু অধিগ্রহণ না করেই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কাজ শুরু করার পর কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আছে।
আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতারের পাশে অবস্থিত আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের গেটের সামনে রাস্তার অনেকখানিজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি টিনশেডের স্থাপনা। ছবি: নিউজবাংলা
সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়া এবং রাস্তা নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়ার সময়সীমা থাকায় এ টিনশেডের স্থাপনা রেখেই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ডিএনসিসি। সঙ্গে চলছে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতারের পাশে অবস্থিত আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের গেটের সামনে রাস্তার অনেকখানিজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি টিনশেডের স্থাপনা। একপাশ টিনঘেরা আর আরেক পাশ অর্থাৎ শ্যামলীমুখী রয়েছে একটি গাড়ি সার্ভিসিংয়ের ওয়ার্কশপ।
স্থাপনার গায়ে লাগানো চারটি সাইনবোর্ড। এর একটিতে প্রথমেই বড় করে লেখা আছে ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি’। পরের লাইনে লেখা: ‘ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক মোসাম্মাৎ নুরজাহান বেগম, স্বামী-মো. আব্দুল মতিন।’ আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা: ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশ রহিয়াছে।’
ওদিকে ফুটপাত ও রাস্তাজুড়ে স্থাপনা হওয়ায় সেটিকে অক্ষত রেখেই সড়কের ফুটপাত প্রশস্ত করে তার ওপর টাইলস বসানোর কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টাইলস মিস্ত্রি সবুর মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে এই বাড়ির জায়গা বাকি রেখে যতটুকু সরকারি জায়গা আছে, ততটুকুর কাজ করতে। এই কারণে আমরা ফুটপাতে অর্ধেক টালি লাগাচ্ছি আর বাকিটুকু ফাঁকা রাখছি।’
এদিকে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী চালক ও পথচারীরা বলছেন, কাজ শুরুর আগেই এই সমস্যা সমাধান করা উচিত ছিল। এখন দ্রুত এই স্থাপনা না সরালে যে কোনো দিন বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এই সড়কে চলাচলকারী আলিফ পরিবহনের চালক মোহাম্মাদ ইব্রাহিম বলেন, ‘এটা একটা সার্কাস ভাই। রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি দেখছি, কিন্তু বাড়ি দেখি নাই। এই রোডে দেখলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই জায়গায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। যখন রাস্তার কাজ পুরোপুরি হয়ে যাবে, তখন গাড়ির গতি থাকবে অনেক, তখনই ঘটবে দুর্ঘটনা।
চঞ্চল বিশ্বাস নামের এক পথচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কর্মকর্তারা অফিসের এসি রুমে বসে রাস্তার নকশা করলে যা হয়, এখানে তাই হয়েছে। কাজ শুরুর আগে এখানে এসে যদি রাস্তার নকশা করত, তাহলে এই সমস্যা হতো না বলে আমি মনে করি।’
টিনশেডের ওয়ার্কশপে কর্মরত ফয়সাল আলমের কাছে এই জমির মালিক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জমির মালিকের ছেলের নাম রহমত উল্লাহ। তিনি মাঝে মাঝে সকালের দিকে এখানে আসেন। তবে তার মোবাইল নম্বর কাউকে দিতে নিষেধ করেছেন। আপনি আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে যান, মালিক এলে আমি তাকে দিব।’
ফয়সাল আরো বলেন, ‘এই জমি সম্পর্কে মালিকের ছেলে আমাকে বলেছে, ১৯৬৪ সালে নাকি তারা এই ছয় শতক জামি কিনেছেন। বছরখানেক আগে সিটি করপোরেশন এই জায়গা বিনা টাকায় নিতে চাইলে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এখন হাইকোর্ট এই জমি নেওয়া বন্ধ রেখেছে।’
ফয়সাল বলেন, ‘সরকার চাইলে তো মালিক জমি দিতে বাধ্য। তাই মালিকও হয়তো চাচ্ছে ভালো মতো ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার যেন তার জমিটা নিয়ে নেয়। কারণ এই রাস্তার মাঝের জমি কেইবা কিনবে? আর কেইবা এই জমিতে বাড়ি বানাবে?’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগাঁরগায়ের এই জমির বিষয়ে ডিএনসিসির দুই বিভাগ জড়িত: সম্পত্তি বিভাগ আর প্রকৌশল বিভাগ। সঙ্গে আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট। আমরা ইতোমধ্যে জমির মালিকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি এবং আইনি প্রক্রিয়াও চলমান আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, এই সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে রাস্তার কাজ শেষ করা। কিন্তু আইনি বিষয় থাকায় একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। আশা করছি, জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তবে রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই জমির সমাধান হবে কি না- এটা বলা কঠিন।’