খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার ১৫টি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ৯টি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা ও ব্যবসায়ীদের নামে চারটি ও আওয়ামী লীগের নেতা এবং সংসদ সদস্যদের মাঝে একটি করে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এসব প্লট বরাদ্দের আগে কেডিএর নীতিমালা মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি সভার কার্যবিবরণীতেও প্লট বরাদ্দের কথা উল্লেখ না করে সেই সভায় প্লটগুলো বরাদ্দ করা হয়েছে। প্লটের সরকার নির্ধারিত যে দাম, তার এক-তৃতীয়াংশ দাম রাখা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে।
২০২২ সালের ২৪ মে ৫৭৭তম বোর্ড সভায় প্লটগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময়ে কেডিএতে সচিব পদটি ফাঁকা থাকায় সভা পরিচালনা করেন এস্টেট শাখার পরিচালক মো. বদিউজ্জামান।
সভায় ৫ কাঠার একটি করে প্লট বরাদ্দ পান প্রতিষ্ঠানটির এস্টেট শাখার পরিচালক মো. বদিউজ্জামান, বোর্ড সদস্য রুনু রেজা, সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জমান বাবু ও খুলনার নিরালা এলাকার ব্যবসায়ী ইকবাল খান।
৩ কাঠার একটি করে প্লট বরাদ্দ পান কেডিএর বোর্ড সদস্য ও খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম ফজলুর রহমান, কেডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর দাশ, কেডিএর সাবেক বোর্ড সদস্য আহসানুল কবীর, আরেক বোর্ড সদস্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নায়লা আহমেদ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মনির হাসান, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল রানা, ঢাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর ও শায়লা নবী।
বাকি তিনটি প্লট কেডিএর ৯ জন জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর মাঝে বণ্টনের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির আহ্বায়ক ও কেডিএর সিনিয়র বৈষয়িক কর্মকর্তা শামীম জেহাদ বলেন, ‘আমরা ৯ জন জ্যেষ্ঠ কর্মচারী বাছাই করেছিলাম, যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, বা দু-এক বছর করে আছে, তাদের মনোনীত করা হয়েছে।’
নীতিমালায় কী কী লঙ্ঘন
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবাসিক প্লট বরাদ্দের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো প্লট বরাদ্দের আগে কেডিএর বৈষয়িক শাখা থেকে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আবাসিক, আবাসিক-কাম-বাণিজ্যিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
তবে এসব প্লট বরাদ্দের আগে সেই নিয়ম মানা হয়নি।
প্লট বরাদ্দের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ শতাংশ কোটা থাকলেও ওই সভায় তাও মানা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকে।
তাতে বলা হয়েছে, কেডিএর ৫৫৭তম বোর্ড সভাটি পরিচালনা করেছিলেন ভারপ্তাপ্ত সচিব মো. বদিউজ্জামান। ওই সভায় ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের এজেন্ডাই ছিল না। এ ছাড়া ময়ূরী আবাসিকে প্রতি কাঠা জমির দাম ১৫ লাখ টাকা হলেও ওই সভার ১৫টি প্লটের জন্য দাম ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা করে। এতে সরকারের প্রায় ১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
বিধিবিধান অনুসরণের দাবি
কেডিএর এস্টেট শাখার পরিচালক মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমি এই কার্যালয়ে যোগদানের আগে ময়ূরী আবাসিক থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর সর্বশেষ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। চলতি বছরে আমরা প্রকল্পটি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন দুই বার লে-আউট সংশোধন করে কিছু প্লট অবিক্রীত পাওয়া যায়। তখন আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিধি মোতাবেক প্লটগুলো বরাদ্ধ দিয়েছি।’
অধিকাংশ প্লটই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্ধ কেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০ শতাংশ সরকারি কর্মচারী ও ৮ শতাংশ আধাসরকারি, ১০ শতাংশ মন্ত্রণালয়ের নামে কোটা থাকে। আমরা সেখান থেকে নিয়েছি।’
এই তালিকার বাইরের কোনো সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা নেই কেন- এমন প্রশ্নের তিনি কিছু বলতে পারেননি।
প্লট বরাদ্দের আগে বিজ্ঞপ্তি না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘এই প্রকল্পের অধিকাংশ প্লট আগেই বরাদ্দ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে আর বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেই সব করা হয়েছে।’
প্লটের জন্য কাঠাপ্রতি দাম কমানো হয়েছে কেন- জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘কেডিএর বোর্ড সভায় এটা অনুমোদিত আছে, এখানের কর্মচারীরা কম দামে প্লট পাবেন। বাইরের কেউ কম দামে পাবেন না।’
অনিয়ম হলে বরাদ্দ বাতিলের আবেদন করবেন আ. লীগ নেতা
প্লট বরাদ্দ পাওয়া খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল রানা বলেন, ‘আমি নিয়মমাফিক তাদের কাছে প্লট পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না জানি না। তারা যদি আমাকে বৈধভাবে না দেয়, তাহলে আমি প্লট বরাদ্দ বাতিলের জন্য আবেদন করব।’