রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা আসাদগেট। কাছেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা। আছে একটি পুলিশ বক্সও। সব মিলিয়ে ঢাকার একটি নিরাপদ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যায় এ এলাকাকে।
এই আসাদগেটেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটেছে দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা। ব্যস্ত সড়কে খোলা ছুরি হাতে তরুণদের আগ্রাসন ধরা পড়েছে এক যাত্রীর ক্যামেরায়। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে; যা মহানগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’র নিচে ফাতেমা খাতুন নামে একজন লিখেছেন, ‘বোঝা যাচ্ছে সামনের দিনগুলো আরও ভয়ংকর হবে।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, যাত্রীরা চিৎকার করে বাসের কন্ডাক্টরকে দরজা আটকাতে বলছেন। ক্লিপের শুরুতে রাস্তায় এক তরুণকে দেখা যায় প্রকাশ্যে চাকু হাতে ঘুরছেন।
এ সময় বাসের একজন যাত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘কতো বড় চাকু হাতে দেখছেন... এই কন্ডাক্টর গেট লাগাও।’
অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘ভিডিও করেন ভাই ভিডিও করেন। ভিডিও করে আপলোড করেন। কি অবস্থা! রাস্তাঘটে মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নাই।’
আরেকজন বলেন, ‘জ্যামের মধ্যে দিন দুপুরে ডাকাতি। পুলিশ দেখলো একটা বাঁশি ফুঁ দিল, চলে গেল।’
তারপর আরেক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা তো ভিআইপি প্রটোকলের পুলিশ।’
শুধু আসাদগেটেই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন সিগন্যালেই বেড়েছে ছিনতাই। সিগন্যাল ও জ্যামে আটকে থাকা যাত্রীদের মোবাইল ফোন জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
কী ঘটেছিল সেই সন্ধ্যায়
যিনি ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করেন তিনিও ওই বাসের যাত্রী ছিলেন। তার নাম হাসিবুল হক আসিফ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসাদ গেটের সিগন্যালে আটকা পড়ে ট্রান্স সিলভা বাসটি। আমার সামনের সিটে একজনের মোবাইল জানালা দিয়ে নিতে আসেন ৩ থেকে ৪ জন ছিনতাইকারী। ওই যাত্রী চিৎকার চেচামেচি করলে তারা চাকু হাতে দৌড়ে আসে মারার জন্য।
‘বাসের সবাই জানালা লাগিয়ে কন্ডাক্টরকে দরজা বন্ধ করতে বলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে হয়তো এমনটা ঘটছে। কিন্তু না, আমাদের সামনেই ওরা আরও কয়েকটা গাড়ি থেকে ছিনতাই করে। সবার হাতেই ধারালো ছুরি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে রাস্তার অপর পাশে একটা পুলিশের গাড়ি ছিনতাইকারীদের দেখে লাঠি দেখিয়ে বাঁশি বাজায়। বাসের সব যাত্রী পুলিশের গাড়ি দেখে চেচিয়ে বলে ভাই ধরেন... ধরেন... এরা ছিনতাইকারী। কিন্তু পুলিশের গাড়ি চলে যায়। হয়তো ওনারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
‘এরপর ছিনতাইকারীরা আমাদের বাসের দিকে আসে। ছুরি হাতে বাসের জানালা দরজা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে। আমরা আবারও বাসের জানালা দরজা বন্ধ করে দিই। এর মধ্যে সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। ওরা আমাদের বাস লক্ষ করে ইট ছোড়ে, পরে ধাওয়া করে। কিন্তু ধরতে পারেনি।’
যার ফোনটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. রাসেল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি ডাক্তার দেখিয়ে বাসে করে ফিরছিলাম। আসাদ গেটের সিগন্যালে ছিনতাইকারীরা জানালা দিয়ে আমার ফোন টান দেয়। নিতে না পেরে আমাকে গালিগালাজ করে। আমি তখন গালিগালাজের উত্তর দেই। পরে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গাড়িতে হামলা চালায়। সিগন্যাল ছেড়ে দেয়ায় রক্ষা পেয়েছি।
‘অল্প সময়ের মধ্যে তারা ওই জায়গায় একটা আতংক সৃষ্টি করে ফেলছিল। এ কারণে কেউ সাহস করে তাদের কিছু বলতে পারেনি। পাশে যে পুলিশের গাড়ি ছিল তারা ভিআইপি প্রটোকল দিচ্ছিল। পরে পুলিশ বিষয়টা জেনেছে। তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন।’
ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচএম আজিমুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আসাদগেটে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’