৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এর মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার না হলে আগামী শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা এই সিদ্ধান্ত জানান।
এর আগে ইন্টার্নদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ইন্টার্ন) বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখনও তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা আজকে হয়তো কাজে ফিরবে বা জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। তবে, আগামী শনিবারের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছে।’
বিকেলে আলোচনা শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘বুধবার রাতে হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ সময় ডাক্তারদের খুঁজে খুঁজে মারারও চেষ্টা চলে। এতে নিরাপত্তাহীতায় কর্মবিরতিতে চলে যান চিকিৎসকরা।
‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাসে ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। তবে বিবেকহীন কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে শনিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ কঠোর আন্দোলনে যাব।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনার জেরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাবি ক্যাম্পাসের আবাসিক হলের বারান্দা থেকে পড়ে আহত অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহরিয়ারকে রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়া হয়।
জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পরই সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর খবর শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষের সামনে গিয়ে ভাঙচুর চালান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নরাও হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবস্থান নেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আর মেডিক্যালের ছাত্ররা অবস্থান নেন হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরের সামনে।
বিপুল পুলিশ অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি সামলে রাখে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, রাত ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে। আলোচনা শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর আন্দোলন স্থগিত করে রাত ২টার দিকে হাসপাতাল ছাড়েন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
হাসপাতালে নিজেদের নিরাপত্তা ও বুধবার রাতে হাসপাতালে হামলায় জড়িত রাবি ছাত্রদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন ইন্টার্নরা। এতে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা, দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে আগের তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে রামেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিনের প্রধান কফিল উদ্দিনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী।
তিনি বলেন, ‘রাতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেখানে আমাকে আহ্বায়াক করা হয়েছিল। কিন্তু আমি একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান। আমাকে অহ্বায়ক বা তদন্ত কমিটিতে রাখতে হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেই কমিটি গঠন করতে হবে। তাই রাতের কমিটি বাতিল করে নতুন ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘যেহেতেু মাথায় আঘাতের বিষয় তাই নিউরো মেডিসিনের প্রধানকে এখানে অহ্বায়ক করা হয়েছে। এই কমিটি তদন্ত করবে; কোথায় চিকিৎসার অবহেলা ছিল, ভাঙচুরের জন্য কে দায়ী, কারা কারা জড়িত এসব চিহ্নিত করবে।’
হাসপাতাল পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘রাবির সেই ছাত্র কীভাবে ছাদ বা বারান্দা থেকে পড়েছে সেটি জানা যায়নি। হামলা ও ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এই মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।’
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা ব্যহতের খবর পাওয়া গেছে। একজন ডাক্তার দিয়েই চলছে পুরো ওয়ার্ডের চিকিৎসা।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে প্রচুর রোগী আছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়া আমরা হাসপাতাল চিন্তাও করতে পারি না। যারা কোনো দোষ করে তারা একটু দুর্বল থাকে। কিন্তু তারা তো প্রপার চিকিৎসা দিয়েছে। এটা ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর কাল রাতের মিটিংয়ে স্বীকারও করেছেন।
‘ছাত্রদের যে ক্ষোভ সেটি হাসপাতালে উপরে কেন? এটি তো রাবির উপরে আসার কথা। কেন ছাত্রটি সেখান থেকে পড়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্ররা শুধুমাত্র আন্দোলনই করেননি। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ডাক্তারদের খুঁজে বের করেছে। এই ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পালিয়ে যায়। হাসপাতালে ২৮০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক আছে। এগুলো আর এখন নেই। তাহলেই বুঝতে পারেন কী অবস্থা হচ্ছে। তারা আমাদের ব্যকবোন। এখন আমাদের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়েই চিকিৎসা চলছে।’