বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুলনায় বাস বন্ধের অন্তরালে আ.লীগের চাপ

  •    
  • ২০ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৩৭

জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির একাধিক নেতা বলেছেন, ‘খুলনা মহানগরে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির সমাবেশে যাতে জনসমাগম কম হয় সেজন্য বাস বন্ধ রাখতে আওয়ামী লীগের নেতারা চাপ সৃষ্টি করেছেন। মালিক সমিতি বাধ্য হয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।’

বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে খুলনায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। যদিও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধ না হওয়ায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একই সংগঠনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে তারা গণপরিবহন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইক চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন এগুলো বন্ধ না করলে ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘সিদ্ধান্তটা মালিক সমিতি নিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশে কেন্দ্র করেও বাস বন্ধ করা হয়েছিল। খুলনাতেও তার বাইরে কিছু হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের নেতাদের ইন্ধনেই হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে সরাসরি বাস মালিক সমিতির কেউ কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতির একাধিক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে যাতে জনসমাগম কম হয় সেজন্য বাস বন্ধ রাখতে আওয়ামী লীগের নেতারা চাপ সৃষ্টি করেছেন। মালিক সমিতি বাধ্য হয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।’

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান।

তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ ঘোষণার সময়ে আমি ঢাকায় ছিলাম। মালিক সমিতির অন্য সদস্যরা আমার সঙ্গে আলোচনা করেই এ ঘোষণা দিয়েছেন।’

বাস বন্ধ করতে আপনি দলীয় কোনো প্রভাব খাটিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা গত এক মাস ধরে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধের জন্য প্রশাসনকে বলে আসছি। গত এক মাসে আমরা কয়েকটি মিটিংও করেছি। আর বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে তাতে আমাদের অসুবিধা কোথায়? তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা না করে আমরা কেন বাস বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে যাব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, ‘বাস আওয়ামী লীগ চালায় না। আমাদের নামে দোষ দিলেই তো হবে না। মালিক সমিতি বাস বন্ধ করেছে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।’

বিপাকে চাকরির পরীক্ষার্থীরা

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৬তম গ্রেডভুক্ত তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মী পদে জনবল নিয়োগের জন্য শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লিখিত/এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পরীক্ষায় খুলনা থেকে আবেদন করেছেন ১৩ হাজার ৩৭৬ জন প্রার্থী। খুলনা শহরের ১৩টি কেন্দ্রে তাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে এই পরীক্ষায় আবেদন করেছেন কমলেশ বৈরাগী। তিনি বলেন, ‘আমি ডুমুরিয়া থেকে খুলনা শহরে যাওয়ার জন্য বাস ব্যবহার করি। ২১ তারিখ বাস চলবে না। এখন ২০ কিলোমিটার পথ ইজিবাইক বা অন্য কোনো গাড়িতে যেতে হবে। অন্তত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এই দিনটাতে তারা বাস বন্ধ না করলেই পারতো।’

পাইকগাছা উপজেলার জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘আমার বাড়ি শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। ভেবেছিলাম পরীক্ষার দিন সকালে চলে আসব। তবে বাস বন্ধের খবরে আগেই শহরে এসেছি। এখন এক বন্ধুর মেসে থাকব।’

খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন বলেন, ‘একযোগে বাংলাদেশে ৬৪টি জেলায় এই পরীক্ষা হচ্ছে। এটা পূর্বঘোষিত। খুলনায় এখন বাস বন্ধ হলে কিছু করার নেই। যারা পরীক্ষার্থী তাদের বলতে চাই, অন্তত একদিন আগে যেন তারা শহরে চলে আসেন।’

ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

খুলনা শহর থেকে প্রতিদিন মোংলায় কর্মস্থলে যান শিহাব আলী। তিনি বলেন, ‘আমি মোংলা ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। দৈনিক সকালে খুলনা থেকে বাসযোগে ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মোংলা যাই। দুদিন বাস বন্ধ থাকলে অফিসে কিভাবে যাওয়া-আসার করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

‘আমার মতো হাজারো মানুষ খুলনা থেকে মোংলায় গিয়ে অফিস করেন। তারা বিপাকে পড়বেন।’

মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৮টি রুটে প্রায় এক হাজার দুশ’ বাস চলাচল করে। আর এসব পরিবহনে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাস বন্ধের এ সিদ্ধান্তে তারা সবাই বিপাকে পড়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর