বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সম্পর্ক সম্ভাবনা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল। এগুলোতে আমরা ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছি। উভয় দেশের সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে। আশা করি সামনে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে। উভয় দেশের অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সেমিনার হয়।
স্পিকার বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে উভয় দেশের সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের সম্পর্ক জোরদারেও গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আশা করি, গণমাধ্যম সেই কাজটি করে যাবে।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সুসংহত করার সুযোগ গণমাধ্যমের রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রসার অবশ্যই গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। তাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কীভাবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি সুসংহত করতে পারি সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফলতার জায়গা অর্জনের যে প্রস্তুতি নিয়েছে সেখানে সব বিষয়গুলো আলোচিত হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে পারস্পরিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই দেশের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
যেকোনো সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন স্পিকার। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের স্থল সীমানার সমাধান হয়েছে, গঙ্গার পানি চুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অর্জন।’
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে মূল বিষয় কম্প্রোমাইস উচিত নয়
ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গীতার্থ পাঠক বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে কমন ঐতিহ্য রয়েছে। তিন বিঘা করিডর, ফারাক্কা-তিস্তা নিয়ে অধিকার আছে। ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদশের অধিকার আছে পানির। সাংবাদিকদের এ বিষয়ে আরও সোচ্চার হতে হবে।’
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। গুলি করা ছাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায় কিনা, সেটি দেখতে হবে। ভিসা সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে মূল বিষয়গুলো কম্প্রোমাইস করা উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্মান্ধতা দূরীকরণে বিষয়গুলো তুলে ধরা উচিত। ইন্দো বাংলা ফোরামের দুই দেশের সাংবাদিকদের আদান-প্রদান হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে ভিসা জটিলতা যেন না থাকে।’
ইতিহাস যেন না ভুলি
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের ও ভারতের সম্পর্কের জটিলতা আছে কিন্তু ইতিহাসের কথা যেন না ভুলি। নদীর পানি বণ্টন আমাদের চুক্তিতে আসতে হবে। কিন্তু তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। ১১ বছর ধরে চুক্তিটি ঝুলে আছে। এটা নিয়ে কতদিন অপেক্ষা করব। এটার স্বাক্ষর কবে হবে তা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। ভারতে ৯ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট কিন্তু আমরা সেখানে কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছি। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। ভারতের মিডিয়া দেখলে বাংলাদেশ যে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আসলেও তা সন্তোষজনক নয়। এই উন্নতি যথেষ্ট নয়।’
মাহাফুজ আনাম বলেন, ‘বিশ্ব যখন বাংলাদেশকে ইকোনমিক মডেল হিসেবে বলছে, ১০টা সেরা ইকোনমিক গ্রোথ দেশের মধ্যে আনছে মানে যখন গ্লোবাল পরিচিত হচ্ছে তখন ভারতীয় মিডিয়াতে তার প্রতিফলন কতটুকু? আমার কাছে মনে হয় আগের থেকে বাংলাদেশ-ভারত ইস্যুতে মিডিয়া অনেক উন্নত হয়েছে কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়।’
তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের উত্থান-পতন ঘটে। এখন অতটা সুসম্পর্ক নেই। সেই দৃষ্টিতে যদি বাংলাদেশকে দেখেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কতটুকু কমছে বা বাড়ছে তাহলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হবে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। নিজস্ব স্বার্থের জন্য আমি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব।’
সেমিনারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।