বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেড় যুগে ১২, নতুন তিন খুনে অশান্ত সিংড়ার বামিহাল

  •    
  • ২০ অক্টোবর, ২০২২ ১২:২৫

সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে বামিহাল পরিচিতি পাওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনিও বিব্রত। যারা যেভাবেই ইন্ধন দিয়ে জনপদকে অশান্ত করে তুলেছেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

একসময় নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল গ্রাম পরিচিত ছিল আতঙ্কের জনপদ হিসেবে। মাঝে সেই আতঙ্ক না থাকলেও নতুন করে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবারও উতপ্ত হচ্ছে জনপদটি।

সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি হামলায় তিনজন নিহত হন। এরপর পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়। মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। আবার গ্রামের অনেকেই এসব থেকে দূরে থাকলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে তাদের। ফলে তারাও গ্রেপ্তার আশঙ্কায় ছেড়েছে গ্রাম।

গত দেড় যুগের অধিক সময়ে চলা এমন পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন। হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই।

অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, এই জনপদে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করছে তারা।

স্থানীয়রা সিংড়ার বামিহাল গ্রামকে বলে ‘রক্তাক্ত জনপদ’। গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই সুকাশ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আফতাব আলীর সঙ্গে বর্তমান ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলামের বিরোধ চলে আসছে। তার জের ধরে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথমে আফতাব গ্রুপের সমর্থকরা বামিহাল দশোপাড়া গ্রামে ফরিদুল সমর্থক রুহুল আমিনের বাড়িতে হামলা চালায়।

এ সময় রুহুল আমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে ফরিদুল সমর্থকরা আফতাব ও তার সমর্থক কালামের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে জখম করে।

স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক আফতাব আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে রুহুল আমিন, কালামসহ তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে রুহুল আমিন মারা যান।

দুজন নিহত হলে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার পর থেকেই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বামিহাল গ্রাম। আফতাব হত্যার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলাম যান আত্মগোপনে। বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জের সলংগা থেকে ইউপি মেম্বার ফরিদুল ইসলামের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বামিহাল গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, পাল্টাপাল্টি মামলায় অপরাধ না করেও মামলার আসামি হয়েছেন গ্রামের অনেকেই। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ। তাই নারী-শিশু-বৃদ্ধদের দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে।

সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে বামিহাল পরিচিতি পাওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনিও বিব্রত। যারা যেভাবেই ইন্ধন দিয়ে জনপদকে অশান্ত করে তুলেছেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ নারী, শিশুরা অপরিচিত ব্যক্তিদের দেখলেই দ্রুত বাড়ির ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ভয়াবহ আতঙ্ক আর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো গ্রামে। নিহত পরিবারের লোকজনও কথা বলতে আগ্রহী না। নিহতের স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলতেও শোনা যায়।

সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আকতার জানান, খাসজমি, পুকুর দখলসহ নানা কারণে আফজাল ও ফরিদুল গ্রুপের সৃষ্টি হয়। বন্দুকযুদ্ধে আফজাল মারা গেলে তার স্থান দখল করে আফতাব। পুনরায় শুরু হয় আফতাব আর ফরিদুল গ্রুপের সহিংসতা। বিবদমান দুটি গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় বিভিন্ন সময়ে হাসেম আলী, আব্দুল মান্নান, চম্পা বেগম, শাজাহান আলী, আনসার আলী, সেলিম হোসেন নিহত হন।

২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বামিহাল পুলিশ ফাঁড়ি লুটের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের প্রধান ফরিদুল, আফজাল ও আফতাব আসামি ছিলেন। গত ৯ অক্টোবর আফতাব বাহিনীর প্রধানসহ দুজন নিহতের ঘটনা এবং বুধবার ফরিদুল খুন নিয়ে দেড় যুগে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ ও হামলায় দুই বাহিনীর প্রধানসহ ১২ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে গ্রামে।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন এখানে হানাহানি, খুনাখুনি না হয়, সে জন্য কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আফতাব হত্যা মামলায় নাজিম উদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রুহুল হত্যা মামলায় রবিউল ইসলাম, আলী হাসান, জুয়েল ইসলাম, হাবিবুর রহমান নামে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

অন্য আসামিদের ধরতে ও জনপদটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান জামিল আকতার।

এ বিভাগের আরো খবর