বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়ম: আজ শেষ হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম

  •    
  • ২০ অক্টোবর, ২০২২ ১০:৪৩

শুনানির শেষ দিনে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‍্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ তিন দিনে ৬৮৫ জনকে শুনানির আওতায় নিয়ে বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ‘ব্যাপক অনিয়ম’ খতিয়ে দেখতে তৃতীয় দিনের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি এ কার্যক্রম শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে ইসির অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে এ শুনানি চলছে।

এতে কমিটির সদস্যসচিব ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

শুনানির শেষ দিনে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রথম দিনের শুনানিতে ১১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষ থেকে), গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ। ছবি: নিউজবাংলা

এ ছাড়া বুধবার দ্বিতীয় দিনে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ৪০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫২২ জনের শুনানি হয়।

শুনানিতে অংশ নেয়া মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের অনেকেই ভোটের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আবার অনেকেই পাল্টা অভিযোগও করেছেন তদন্ত কমিটির কাছে। অনেকে সুষ্ঠু ভোটের দাবি করলেও কেউ কেউ ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ভয়ে নিরুপায়ও ছিলেন বলে তদন্তে জানিয়েছেন।

তবে পোলিং এজেন্টের অধিকাংশই নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে সাফাই করেন।

ভোটের দিন বহিরাগত যুবকদের কাছে ‘সুষ্ঠু ভোট হয়েছে’ লিখে দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে সাঘাটা উপজেলা সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় দিনের তদন্তের সময় গণশুনানিতে এ কথা জানান তারা।

এদিন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ৫২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত কমিটি। এতে নির্বাচনের নানা অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির বিষয়ে চিত্র তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনে সব কেন্দ্র সিসিটিভি দিয়ে ঢাকার নির্বাচন ভবনে বসে পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এ সময় দেখা যায়, ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর তিনি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছেন না। গোপন কক্ষে উপস্থিত অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তার হয়ে ভোট দিয়েছেন বা ভোট দিতে চাপ দিয়েছেন।

অভিযোগ স্পষ্টত আওয়ামী লীগের নোত-কর্মীদের দিকে। তবে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে কার দোষে এই ঘটনা ঘটল, সেটি তদন্ত করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে। এখনও এই প্রতিবেদন আসেনি, ফলে নির্বাচন কমিশন তার করণীয়ও ঠিক করেনি।

সেদিনের ঘটনা তুলে ধরে প্রিসাইডিং অফিসাররা বলেন, ভোটের পরিবেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তার ছাড়াও অন্যের ভোট জোর করে নির্দিষ্ট প্রতীকে দিতে বাধ্য করা হয় অনেক ভোটারকে। তার পরও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে কাগজে সই দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

শুনানিতে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানায়, তাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। অনেক কেন্দ্রের কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টরা বুথে বহিরাগতদের উপস্থিতি ও ভোট প্রভাবিত করার কথা কমিটির সামনে বলেছেন। সেদিন নির্বাচনি পরিবেশ ও কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে বিস্তারিত বলেন। তবে অনেকেই কৌশলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

এই নির্বাচনের ঘটনাটি তদন্তে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ ৬৮৫ জনকে তিন দিনের শুনানির জন্য তলব করে ইসির তদন্ত কমিটি।

বুধবারের শুনানিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটের দিন সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছিল। দুপুর ১২টা নাগাদ কয়েকজন সাদা গেঞ্জি পরিহিত যুবক কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তারা ভোটদানের গোপন কক্ষে গিয়ে জোর করে নির্দিষ্ট প্রতীকের বাটনে চাপ দেয়।’

তিনি বলেন, ‘সেদিন ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ার পর আমার কাছে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা আসেন। পরে জোর করে ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল; এমন স্টেটমেন্ট সাদা কাগজে লিখে নেন। আমি দিতে চাইনি। পরে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়।’

সামাজিক মাধ্যমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত স্টেটমেট ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের মধ্যে সমরপাড়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মশিউর রহমানের একটি স্টেটমেট ছিল এমন:

‘নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ রিটার্নিং অফিসার মো. কামরুল ইসলামের নির্দেশনায় আমি মশিউর রহমান প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে সমরপাড়া দাখিল মাদরাসার ভোটগ্রহণ বন্ধ করলাম। ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে; কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হয়নি। ভোটগ্রহণ করা হয়েছে ৯০১টি। আমরা ৩ ঘটিকায় ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করিলাম।’

সন্ন্যাসদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন সকাল থেকে ভোটগ্রহণ চলছিল। এরপর হঠাৎ ইসির ফোন পাই। তখন তিনি পাশের একটি কক্ষে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক যুবককে আটক করতে বলেন। পরবর্তী সময়ে আমি তাকে আটক করে আমার কক্ষে রাখি। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয় আমার কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। আমাকে ভোটের সব সরঞ্জাম নিয়ে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে বলেন। পরে ইসির নির্দেশে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলাও করি।’

মজিদের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন আমার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটে কোনো প্রভাব বিস্তার হয়নি।’

বুধবার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘শুনানিতে অংশ নেয়া মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ভোটের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আবার অনেকেই পাল্টা অভিযোগও করেছেন তদন্ত কমিটির কাছে। অনেকে সুষ্ঠু ভোটের দাবি করলেও কেউ কেউ ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ভয়ে নিরূপায়ও ছিলেন বলে জানিয়েছেন।’

গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ২০ অক্টোবরের মধ্যে সেখানে ভোট করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে সেদিন ভোট করতে না পারাকে দৈবদুর্বিপাক হিসেবে বিবেচনা করে সংবিধানের একটি ধারা ব্যবহার করে সময় আরও ৯০ দিন বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সেখানে ভোট করার কথা জানানো হয়েছে।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপ-নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল।

সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।

এ বিভাগের আরো খবর