বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়েকে জোর করে মাদ্রাসায় পাঠালেন বাবা, পেলেন মৃতদেহ

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:৩৮

মাদ্রাসার গেটম্যান ইদ্রিস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, “বাড়ি থেকে নির্যাতন করে ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসায় নিয়ে এসেছিলেন বাবা। এ সময় আফরিন বলছিল, ‘আমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করব না, বেশি জোর করলে ফাঁস লাগিয়ে মারা যাব'।”

নরসিংদীর শেখেরচরে মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, বাবা জোর করে মাদ্রাসায় পাঠানোর কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। জোর করে পাঠানোর কথা স্বীকারও করেছেন তার বাবা। তবে কী কারণে মাদ্রাসায় যেতে চায়নি মেয়েটি, তা জানা নেই বলে দাবি বাবার।

শেখেরচরের জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে বুধবার দুপুরে পাওয়া যায় ১৬ বছরের আফরিন আক্তারের মরদেহ। সেটি সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ঘটনা জানাজানি হয়। বুধবার রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মরদেহ সেখানেই আছে।

নিউজবাংলাকে এসব নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের পরিদর্শক আসাদ মিয়া।

আফরিনের বাড়ি সদর উপজেলার মাধবদী থানার দড়িগাজীরগাঁও এলাকায়। সে ওই মাদ্রাসায় ফাজিল প্রথম বর্ষে পড়ত। তার বাবার নাম ডালিম মিয়া।

মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আহসানুল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, বুধবার সকাল ৮টার কিছু আগে আফরিনকে নিয়ে আসেন তার বাবা ডালিম। আফরিন মাদ্রাসার গেট দিয়ে ঢুকতে চাচ্ছিল না। তাকে জোর করে ভেতরের দিকে ঠেলে দিতে দেখা যায় ডালিমকে।

মাদ্রাসার গেটম্যান ইদ্রিস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, “বাড়ি থেকে নির্যাতন করে ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসায় নিয়ে এসেছিলেন বাবা। এ সময় আফরিন বলছিল, ‘আমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করব না, বেশি জোর করলে ফাঁস লাগিয়ে মারা যাব।’

“তখন আমার সামনেই তার বাবা বলছিল, ‘মরলে মাদ্রাসার ভেতরেই মর, আমি এসে মরদেহ নিয়ে যাব।’ এর আগেও অনেকবার জোর করে মেয়েকে এখানে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।”

শিক্ষক আহসানুল্লাহ ও আফরিনের সহপাঠীরা জানায়, মাদ্রাসায় এসে সকালে যথারীতি ক্লাস করছিল আফরিন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চারতলার শৌচাগারে যায় সে। এরপর আর ক্লাসে ফিরে না আসায় কয়েকজন ছাত্রী তাকে খুঁজতে যায়।

তারা শৌচাগারে আফরিনকে দেয়ালের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে নিজের ওড়নায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। মাদ্রাসার শিক্ষকরা গিয়ে তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আহসানুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পারিবারিক কারণেই ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গেটসংলগ্ন সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, মেয়েকে জোর করে মাদ্রাসায় দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা। কী কারণে ওই ছাত্রী মাদ্রাসায় আসতে চাইছিল না, এটি খুঁজে বের করতে পারলেই আত্মহত্যার কারণ জানা যাবে। এই ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বাবা ডালিম মিয়া মেয়ের বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনে আবেদনের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। তবে ময়নাতদন্তের পরই মরদেহ হস্তান্তর হবে বলে নিউজবাংলাকে জানান সদর হাসপাতালের পরিদর্শক আসাদ মিয়া।

ডালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ওই মাদ্রাসায় পড়তে চাচ্ছিল না। আজ সকালে সে বলছিল, মাদ্রাসায় পাঠালে কিছু খাবে না। আমি বলেছিলাম, না খেলে না খাবি, মাদ্রাসায় যেতেই হবে।

‘পরে আমি একপ্রকার জোর করে ওই মাদ্রাসায় দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এই সামান্য কারণে মেয়ে আমার অত্মহত্যা করে বসবে, ভাবতে পারছি না। দুপুরে শিক্ষকদের কাছে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে তার মরদেহ দেখতে পেয়েছি।’

মাদ্রাসায় দিলে আত্মহত্যা করবে বলার পরও মেয়েকে কেন জোর করলেন- জানতে চাইলে ডালিম দাবি করেন, এ ধরনের কথা মেয়ের সঙ্গে তার হয়নি।

আফরিনের পরিবারের অন্য কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে তার প্রতিবেশী সফিক মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডালিমের মেয়ের মাদ্রাসায় পড়তে আগ্রহ ছিল না। মাঝেমধ্যে এসব কথা শুনতাম ডালিমের মুখে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতে হাসপাতালে এসেছি।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোজী সরকার জানান, আফরিনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন আছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তে জানা যাবে।

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন জানান, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি ওই ছাত্রীর বাবা জেলা প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ নেই মর্মে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর