কিছুদিন ধরে সুন্দরবনের পানি ও মাটিতে প্লাস্টিক পার্টিক্যালের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ছাড়াও তিনি জানান, সুন্দরবনের করমজল ও সুতারখালী জনপদ সংলগ্ন এলাকার পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির তুলনায় দক্ষিণে সুন্দরবনের সৈকত সন্নিহিত এলাকার পানিতে এর পরিমাণ বেশি।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে ‘ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনপর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
ভারতের ‘ইনস্টিটিউট অব ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ (আইইএন্ডইএস) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বেডস’ এর যৌথ আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
যৌথ গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনা ও দিক-নির্দেশনার জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ইকোটক্সিকোলজির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচাতে গবেষণা জোরদার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও ভারতের ভৌগলিক ও পরিবেশগত প্রকৃতি প্রায় একই রকম। ফলে এখানে নানা বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুস্থ পরিবেশের ওপরই সুস্থ-সুখী জীবন নির্ভরশীল। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রকৃতিকে দূষণমুক্ত রাখা, স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। জীবন ধারণের প্রয়োজনে, মানোন্নয়নে, বিলাস-বসনে শিল্প, কৃষিসহ অবকাঠামোর বিকাশ ঘটাতে গিয়ে নানা অবস্থা ও মাধ্যমে ক্ষতিকর অজৈবজাত উপকরণ ব্যাহত হচ্ছে।’
উপাচার্য জানান, মাটি, পানি ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমনকি বাতাসও দূষিত হচ্ছে। এ ক্ষতির প্রধান শিকার মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ।
উদ্বোধনের পর কি-নোট স্পিকার হিসেবে ‘Is the Sundarbans of Bangladesh in a state of pollution’ শীর্ষক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
মূল নিবন্ধে তিনি সুন্দরবনের মাটি, পানি, পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিসহ জীববৈচিত্র্যের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, ‘সুন্দরবনের ওপর নানামুখী চাপ বাড়ছে। সুন্দরবনের স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ অবারিত রাখা প্রয়োজন। তা না হলে এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অনেকটাই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনপর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। সভাপতির বক্তব্য রাখেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারপার্সন আইইএন্ডইএস এর সভাপতি ড. শর্মিলা পাল।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন- আয়োজক কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি বেডস এর প্রধান নির্বাহী মো. মাকসুদুর রহমান, আয়োজক কমিটির ভারত চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক আইইএন্ডইএস এর সেক্রেটারি ড. দেবব্রত মুখার্জি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত ও ইতালির জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে আয়োজক কমিটি এবং কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউশনের ১৩০ জন প্রতিনিধি সশরীরে অংশগ্রহণ করছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন গবেষকরা। সম্মেলনে ১০টি সেশনে শতাধিক নিবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।