তথ্য সচিব ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো নিয়ে সরকার নীরব। তাদের ব্যাপারে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের নেপথ্য কারণ সম্পর্কেও কোনো বক্তব্য নেই।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ কের সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি। সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।
রোববার তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘জনস্বার্থে’ চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত তার চাকরির মেয়াদ ছিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন (৫৫১৪)-কে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো।’
এদিকে তথ্য সচিবকে অবসরে পাঠানোর দুদিন পর মঙ্গলবার পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও একইভাবে অবসরে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে দুইজন অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ও অপরজন পুলিশ অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে পুলিশের এই তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অবসরে পাঠানো পুলিশ সুপাররা হলেন- সিআইডির মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী ও মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা এবং পুলিশ অধিদপ্তরের মো. শহীদুল্ল্যাহ চৌধুরী।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। তবে তাদের কেউই এই চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেননি।
মেয়াদ শেষের আগেই তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে সরকারি নির্দেশে অবসরে পাঠানোর পেছনে ‘নিশ্চই কারণ আছে’ বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বললেও সেই কারণটা তিনি নিজেও জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠিয়েছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উনি বলেছেন যে তারা কাজ করতেন না। অনেক কারণই তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা মনে হয় না, সেটা নিয়ে আর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে।
‘কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যখন এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয় তখন নিশ্চয়ই এর নেপথ্যে কোনো কারণ থাকে। সেই কারণ অবশ্য আমার জানা নেই।’
তথ্য সচিবকে অবসরে পাঠানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘কারণ ছাড়া তো এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয় না। কারণ নিশ্চয়ই আছে। তবে অন্তর্নিহিত কারণ আমি জানি না।
‘কারও ব্যাপারে আমার অভিযোগ-অনুযোগ নেই। আমি সবার সঙ্গেই কাজ করতে পারি।’
একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্ভবত এটি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে হয়তো এই কর্মকর্তাদের সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের তথ্য এসেছে। তা না হলে এমনটা হওয়ার কথা নয়।
‘আমাদের সরকার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি অত্যন্ত সদয়। গুরুতর কোনো অপরাধ না থাকলে কোনো সচিবকে এভাবে অবসরে পাঠানোর নজির নেই।’
তিন পুলিশ সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি
সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা রুটিন ওয়ার্ক। আইনেই আছে, ২৫ বছর চাকরির পর সরকার যে কোনো কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠাতে পারে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা আছেন, মনে হচ্ছে তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে। তাদের সার্ভিস হয়তো সন্তোষজনক নয়, সে জন্য এমন পদক্ষেপ।’
এ সময় মোজাম্মেল হকের পাশে বসে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আরেকদিন বলব।’