আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বলে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘খেলে’ পারবে না বিএনপি।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যত মানুষ হয়, আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনেই তত মানুষ হয় বলেও দাবি করেন কাদের। ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ ও ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার সম্মেলনে দৃষ্টি রাখতে বিএনপি নেতাদের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
বঙ্গবন্ধুর ছোট শেখ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ-শেখ রাসেল’ বিষয়ে এক আলোচনা ও মেধাবৃত্তি, বিশেষ অনুদান ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান অনুষ্ঠানে যান তিনি। এর আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি।
বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম দেখে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘আমাদের লোকের ভয় দেখায়? গতকাল রাসেলের জন্মদিন বনানীর দৃশ্য কি দেখেছেন? বনানীতে ফুল দিতে ওখানে কত হাজার তরুণ উপস্থিত ছিল?
‘বড় বড় কথা বলেন। দেখবেন লোক, ২৩ তারিখে নারায়ণগঞ্জে আসেন; সম্মেলন, জনসভা নয়। ২৯ তারিখে ঢাকা জেলার। আসুন বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারের পাশে যেখানে বাণিজ্য মেলা হতো, সেখানে ঢাকা জেলার সম্মেলন।
‘লোক দেখতে চান? সেখানে শেখ হাসিনা আসছেন না। সেখানে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যাবে। জনসংখ্যা কত হয় দেখতে আসেন? চিটাগাংয়ে ১০ লাখ বলছেন, কিন্তু লাখের কাছাকাছি হয়েছে। শেখ হাসিনা গেলে কত হবে? মিনিমাম ১০ লাখ।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছে। শনিবার খুলনায় হবে সমাবেশ।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ করতে চায়। সেখানে ১০ লাখ মানুষের সমাগম এবং সেদিন থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চলবে বলে ঘোষণা এসেছে দলটির কয়েকজন নেতার পক্ষ থেকে। অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা এই ঘোষণা দিয়েছেন, তারা দলের নীতিনির্ধারক কেউ না।
বিএনপিকে কাদের বলেন, ‘খেলবেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে? পারবেন না। আমি তো বলেছি ১০ লাখ নিয়ে বসতে চান সেটা তো পারবেন না। আর আমরা যদি ৩০ লাখ নিয়ে বসি এই নগরীর কী অবস্থা হবে?
‘এমনি তো আপনারা যেখানেই মিটিং করেন সেখানেই যানজট। সেখানে আবার সরকারকে দোষ দেন। যেখানে মিটিং করেন সেখানেই রাস্তা বন্ধ করে মিটিং করেন।’
আওয়ামী লীগকে রাজপথের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বলেও জানিয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘রাজপথের ভয় দেখাচ্ছেন? ডিসেম্বর মাসে ১০ লাখ নিয়ে বসবেন কোথায়? ঢাকার রাজপথে? ডিসেম্বর বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আপনাদের নয়, আমাদের মাস, মুক্তিযুদ্ধের মাস। ডিসেম্বরে বিজয়ের পতাকা হাতে লাখ লাখ লোক ঢাকার রাজপথে নামবে।’
২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি দেশে আর হবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না ইনশাআল্লাহ। ২০০১ সাল ভুলে যান। এখন কত? ২০২২ সাল।
‘২০০১ সালে কত আকাম কুকাম করেছেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় এসে লুটপাট, রক্তপাত, দুঃশাসন, নারী নির্যাতন, গুম, খুন কী না করেছেন? সেই দুঃশাসনের সেই লুটপাটের হাওয়া ভবনে বাংলাদেশের মানুষ আর ফিরে যাবে না। সেই সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের দেশে বাংলাদেশের মানুষ আর যাবে না।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আজকে আপনারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখ কচলাতে কচলাতে কয়েকজন গুলশানে যান, বারিধারায় যান, ব্রেকফাস্ট করেন। আবার রাতের বেলায় ডিনার খেতে খেতে নালিশ করেন। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বিএনপি এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি । বড় বড় কথা বলেন, লজ্জা করে না। আপনাদের লজ্জা থাকা উচিত।’
২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পর বিএনপির উল্লাসের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাদের বলেন, ‘ভারতে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ছুটির দিন ভোর বেলা গিয়ে ফুল আর মিষ্টি হাতে দূতাবাসের সামনে কারা দাঁড়িয়েছিল? নরেন্দ্র মোদী তাদের ক্ষমতায় বসাবে? কোনো বিদেশি শক্তি কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না। বাংলাদেশের জনগণই ক্ষমতায় বসাতে পারে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদের সদস্য আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।