পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাকটর প্রেশার ভেসেল বা পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঈশ্বরদীতে বুধবার সকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনকাজ শুরু হয়।
গণভবনপ্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্থাপনকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি আজকে বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জনের দিন হিসেবেই আমাদের ইতিহাসে এটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
২০২৩ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায়ই শেষ হয়ে এসেছে। হয়তো ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম যে ইউনিট, সেখান থেকে হয়তো বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। আমি সবাইকে বলব, দোয়া করেন, যেন এটা আমরা করতে পারি। ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটও চালু হওয়ার আশা রাখি।’
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কোনো ঝুঁকি না থাকার কথাটি আবারও দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পরমাণু শক্তি থেকে যে বিদ্যুৎটা আসবে, এখন যেমন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, আমাদের কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো রকম অ্যামিশন (নির্গমন) হবে না। কোনো রকম পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে না। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এটা মানুষকে দিতে পারব।’
দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। তা আমাদের দেশের কোনো রকম ক্ষতি করবে না; বরং আমাদের মানুষ খুব স্বচ্ছ একটা বিদ্যুৎ পাবে এবং যে বিদ্যুৎ তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে যাবে।’
২০১৩ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারটা মানুষের কল্যাণের জন্য, কিন্তু এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটা নির্মাণ এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। সে জন্য লোকবল সৃষ্টি করা, তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—অনেকগুলো বিষয় সেখানে থাকে, যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করি এবং আমরা ব্যবস্থা নিই।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করার আগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো আমলে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকার থ্রি মাইল আইল্যান্ড, রাশিয়ার চেরনোবিল, জাপানের ফুকুশিমা—যে সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যতে আমাদের এখানে যাতে কোনো রকম এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে ব্যবস্থা আমরা নিই।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র রাশিয়া ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান। এ ছাড়াও সার্বিক সহযোগিতার জন্য রূপপুরের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র না, আপনাদের এ কথাটা মনে রাখতে হবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার, এই শক্তিটা, এর যে ব্যবহারটা শান্তিপূর্ণভাবে উন্নয়নের জন্য, সে একটা দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ স্থাপন করেছে বিশ্বব্যাপী। এটা সবার মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের দেশে সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, ট্রেনিং দিয়ে এটা করে যাচ্ছি।’
দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সে জন্য আমরা যেমন একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি, পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।
‘বিশেষ করে রূপপুর পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ, যেখানে চিরদিন মঙ্গা লেগে থাকত, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, এই যে আশ্বিন-কার্তিক মাস আসলে সেখানে দুর্ভিক্ষ হতো, এখন সেগুলো আমরা দুর্ভিক্ষমুক্ত তো করতে পেরেছি, তারপর তো কর্মসংস্থানের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। সেখানকার মানুষের আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।’