গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই কমিটি ভোটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ ৬৮৫ জনের শুনানি করবে ইসি।
ভোটে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যারা কথা শোনেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পুরো এখতিয়ার রয়েছে বেলে জানান ইসি আলমগীর। বলেন, ‘যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তারা স্বেচ্ছায়, স্বউদ্যোগে এগুলো করেছেন, একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল তারা নেননি, এটা যদি প্রমাণ হয় তাহলে চাকরিচ্যুত থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই মাস পর্যন্ত সাসপেন্ড করতে পারি। আর আইন যেটা বলে, আমরা যে শাস্তির সুপারিশ করব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে আমাদের জানাবে। আমরা বললে তারা করলেন বা করলেন না তা নয়। বাস্তবায়ন না করলে সেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারি। কার কেমন অপরাধ সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
২০, ৩০, ৪০ জন কর্মকর্তা একই অপরাধ করলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সংখ্যা বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি অপরাধ করেছেন কিনা। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। সব ভিডিও আছে। কিন্তু কেন করলেন সেটা কিন্তু বের করতে হবে। খুন করলেই তো ফাঁসি দেন না জজ সাহেব। এটার প্রক্রিয়া আছে। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন, ডিজিটাল যুগের সুবিধা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগের কমিশন কী করেছেন সেটা নিয়ে বলব না। আমরা আইসিটির সুবিধাটা নিয়েছি। সিসিটিভির মাধ্যমে আমরা নিজেরাই দেখলাম। এখন তারা স্বেচ্ছায় (অনিয়ম) করেছে নাকি চাপের মুখে করেছে এটাই দেখার বিষয়।’
আলমগীর বলেন, ‘এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে যেহেতু নিজেরাই আমরা অনিয়ম দেখেছি, তার অর্থ বাকিগুলোতেও শৃঙ্খলা ছিল নয়। অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তির সিদ্ধান্ত হবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, ‘মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই সিসি ক্যামেরা বিষয় এমন নয়। টিমের সবাই তো খারাপ না। দু-একজন হতে পারে। আমাদের ওপর যেমন তাদের আস্থা আছে, আমাদেরও তাদের ওপর আছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তো একই ডিসি, একই এসপি দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কাজেই একটা খারাপ হলে যে আরেকটা খারাপ হবে তা নয়।’
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। একটি কেন্দ্র বন্ধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মোট ৫১টি কেন্দ্র দুপুরের মধ্যেই বন্ধ হওয়ায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি।
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা যেটা দেখেছি, যে অভিযোগটা আছে, যে অন্য কেউ ইভিএমে ভোটটা গোপন কক্ষে দিয়ে যায়। কুমিল্লায়, ঝিনাইদহে এটা আমরা দেখিনি। মেহেরপুরেও দেখিনি। কিন্তু গাইবান্ধায় ভোট শুরুর পরপরই তিনটা কক্ষে দেখি যে এজেন্টরা গোপন কক্ষে গিয়ে চাপ দিয়ে দেন। আমরা ক্যামেরায় দেখে প্রিজাইডিং অফিসারকে ফোন করি। আমরা পেছনে দেখতে বলি উনি কেন জানি সামনের দিকে যান। যখন ডানে যেতে বলি উনি তখন উনি বামে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে আশ্চর্য লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে (গোপন কক্ষের অবৈধ ব্যক্তি) আইনে সোপর্দ করতে বলি, উনি (প্রিজাইডিং কর্মকর্তা) তাও করলেন না। পরপর তিনটা কেন্দ্রে এমন হলো। তারা কোনো ব্যবস্থাও নিলেন না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নিলেন না। এরপর কেন্দ্র তিনটি বন্ধ করলাম। অন্যান্য কেন্দ্রের পরিস্থিতিও সিসি ক্যামেরায় দেখা শুরু করলাম। তখন যেটাই দেখি, দেখি একই অবস্থা। একই দৃশ্য। এরপর সিইসি ডিসি-এসপির সঙ্গে কথা বললেন। দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বললেন।
‘আমরা সোয়া ১২টা পর্যন্ত দেখলাম। এখন চোখের সামনে যেহেতু আমরা দেখেছি সিসি ক্যামেরায় বড় পর্দায় সবার সামনে, তখন তো আমরা বলতে পারি না আর্থিক অনটনের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা যেতে পারে। এটার কোনো সুযোগ আছে? যেহেতু সুযোগ নেই, আইন অনুযায়ী যা করা উচিত সে সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে।’
অনেক কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে লিখিত দিয়েছেন এ বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, ‘প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য দেয়ার একটা ফরম আছে। আমাদের কাছে কিছু পাঠায়নি। কার কাছে কী দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। আইনতভাবে এটা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে কে দিল, কাকে দিল। এরপর আমরা দেখব।’
আলমগীর বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত শুনানি করে সাতদিনের মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপ-নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল।
সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।